বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ক্যানসারে মৃতু্য

ব্যক্তি সচেতনতা জরুরি
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ক্যানসারে মৃতু্য

দেশে দৈনিক গড়ে ৪৫৮ জন নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। আর ক্যানসারে দৈনিক গড়ে মারা যাচ্ছে ৩১৯ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে এমন চিত্রই দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রোগের প্রকোপের তুলনায় দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। মৃতু্যর হারের ক্ষেত্রেও পুরুষের সংখ্যা বেশি। মৃত রোগীদের হিসাব বাদ দিয়ে দেশে এখন ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৪৬ হাজারের কিছু বেশি।

কমপক্ষে ৩২ ধরনের ক্যানসারে আমাদের দেশের মানুষ আক্রান্ত হন বলে তথ্য দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ক্যানসার দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এ রোগের চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। দরিদ্র মানুষের পক্ষে ক্যানসারের চিকিৎসা শেষ করে আরোগ্য লাভ করা কঠিন। দেশের ধনীদের একটি বড় অংশ ক্যানসার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। আস্থা রেখে ক্যানসার চিকিৎসা করা যায়, এমন প্রতিষ্ঠান দেশে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশে খাদ্যনালির (গলবিল থেকে খাদ্যনালি পর্যন্ত) ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। দেশে প্রধান পাঁচটি ক্যানসারের মধ্যে খাদ্যনালি, ঠোঁট ও মুখ, ফুসফুস, স্তন ও জরায়ু ক্যানসার। পুরুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালির ক্যানসার বেশি, আর নারীর ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার বেশি। তবে মৃতু্য বেশি হচ্ছে খাদ্যনালির ক্যানসারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচলে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, হৃদ্‌?রোগ, কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। বর্তমানে ক্যানসার অনেক বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যানসারে মৃতু্যবরণ করে। এর মধ্যে ৪০ লাখ এর ঘটে অকালমৃতু্য। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে কিছু কাজ সম্মিলিতভাবে সফল করা সম্ভব। আবার ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই পারি ক্যানসারের বোঝা লাঘবে ভূমিকা রাখতে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের ওপর ক্যানসারের ক্ষতিকর প্রভাব লাঘবে সবারই সুযোগ আছে ব্যবস্থা নেয়ার। ক্যানসার অনেক সময় নিঃশব্দে হানা দিতে পারে সুখের জগতে। স্বাস্থ্য সচেতন না হলে হয়তো ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যাবে না কীভাবে দুঃস্বপ্নময় জীবনের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছি আমরা। ভাগ্যবান হলে অনেক সময় অন্যান্য কোনো সাধারণ রোগ পরীক্ষার সময় ঘটনাচ্ছলে রোগীরা টের পান যে, তাদের শরীরে নিঃশব্দে ঢুকে পড়েছে ঘাতক ক্যানসার। এরপর শুরু হয় যুদ্ধ। শুধু বেঁচে থাকার যুদ্ধ। রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, দেশ- বিদেশের অনকোলজিস্ট, ব্যাপক টাকা-পয়সা খরচ করে অবশেষে একদিন জেগে ওঠেন একজন ক্যানসার সারভাইভার অকুতোভয় যোদ্ধা। এসবই প্রাথমিকভাবে শরীরে দানা বেঁধে থাকা ক্যানসারের গল্প। কিন্তু এমন কিছু ক্যানসার রয়েছে- যা কিনা মানুষকে ভেবে দেখার সময় দেবে না।

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত বাস্তবসম্মত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। করতে হবে ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি পরিহার। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলেই ক্যানসার প্রতিরোধে অনেকাংশে সাফল্য আসবে এবং ক্যানসারে আক্রান্তদের সিংহভাগ মৃতু্য রোধ করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে