শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না পণ্য

আব্দুলস্নাহ আল মুনাইম শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না পণ্য

চলতি রমজান মাসেও নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যে বেকায়দায় মধ্যবিত্তরা। সরকারি কোনো নির্দেশনা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। যে যার মতো মূল্য নির্ধারণ করে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে বেকায়দায় পড়ছেন মধ্যবিত্ত মানুষেরা। নিম্নআয়ের মানুষের কাছে বাজার করা যেন যুদ্ধের মতো। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি জানান তার বর্তমান বেতন ১৫ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে তার খুব একটা বেতন বাড়েনি। কিন্তু সে অনুযায়ী চাহিদা বেড়েই চলছে। কমেছে তার পণ্য ক্রয়ের ক্ষমতা। এই লাগামহীর বাজার দরে তার পরিবারের ভরণপোষণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ১০ বছরে চালের দাম বেড়েছে ১২২ শতাংশ। ২০১৪ সালে যে চালের কেজি ছিল ৩৬ টাকা ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরে চালের মূল্য বেড়েছে গড়ে ৬১ শতাংশ। মধ্যবিত্তরা কীভাবে জীবনযাপন করছে- তাই পরিসংখ্যান থেকেই আন্দাজ করা যায়। কৃষক এক কেজি বেগুন বিক্রি করছে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে আর ভোক্তারা সেই বেগুন কিনছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এসব সবজি আসতে পাঁচ থেকে ছয় গুণ মূল্যবৃদ্ধির কারণ অজানা। ব্যবসায়ীরা জানান, পথে পথে চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত পরিবহণ খরচের কারণে তাদের মূল্যবৃদ্ধি করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন বন্ধ করতে পারছে না এসব চাঁদাবাজি। নেই কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা। এ কারণে ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে পারছেন না পণ্যের। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ১৫ মার্চ ২৯টি পণ্যের মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। রমজান মাস উপলক্ষে মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও বাজারে ওই নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। এতেই বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সবকিছু তাদের ক্রয়-ক্ষমতার বাহিরে। সরকার এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামাতে পারছে না কোনোভাবেই। জনগণকে যেন জিম্মি করে রেখেছে। সরকারের বেঁধে দেওয়ার দাম অনুসারে প্রতি কেজি গরুর মাংস সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৬৪ টাকার মধ্যে হওয়ার কথা। কিন্তু সব বাজারেই ৭৫০ টাকা কিনতে হচ্ছে গরুর মাংস। ক্ষেত্র ভেদে কসাইরা আরো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ব্রয়লারের ১৭৫ টাকা এবং সোনালি মুরগির ২৬২ টাকা হলেও তা মানছে না ব্যবসায়ীরা। পাঙ্গাস মাছের খুচরা দাম ১৮১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী পাইকারি বাজারে ছোলার দাম সর্বোচ্চ ৯৩ এবং খুচরা পর্যায়ে ৯৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। মসুর ডাল খুচরা পর্যায়ে ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা, মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হবে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা এবং খেসারি ডালের খুচরা মূল্য হবে ৯৩ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা যা এখন বাজারে ৮০ টাকার অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। রসুন ১২০ টাকা আদা ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কিনতে হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে। সবজির ক্ষেত্রেও নির্ধারণ করে দেওয়া মূল্য মানছেন না ব্যবসায়ীরা। বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, শিম, মিষ্টি কুমড়াসহ সবকিছুই ১০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। রোজার অতি প্রয়োজনীয় একটি পণ্য খেজুর যা এখন মধ্যবিত্তদের সামর্থ্যের বাহিরে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিম্নমানের খেজুরের কেজিপ্রতি দাম হবে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল জনপ্রিয় জাহেদি খেজুরের কেজিপ্রতি দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। কিন্তু বাজারে এখনো ২৫০ টাকার নিচে কোনো সাধারণ খেজুর পাওয়া যায় না। লেবুর হালি ৫০ টাকার বেশি। ৩০ থেকে ৪০ টাকার নিচে এক হালি কলা পাওয়া যায় না। এছাড়া প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। দাম শুনে ক্রেতারা না কিনেই চলে যাচ্ছেন। সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারের ১০ টাকা কমানোর কথা থাকলেও এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। লিটার প্রতি ১০ টাকা কমে ১৬৫ টাকায় বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হওয়ার কত থাকলেও সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এমনকি খোলা তেলের দামও কমেনি। ব্যবসায়ীরা জানান বেশি দামে আগাম কেনা তেল এজন্য তারা দাম কমাতে পারছেন না। দাম কমাতে এবারও সরকার অনেক ভোগ্যপণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কোনো কোনো পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে কিন্তু তারপরও দাম বেড়ে চলছে প্রতিনিয়তই। মধ্যেবিত্তদের নীরব কান্না যেন থামছেই না। ভোগ্যপণ্য লুকিয়ে যারা দাম বাড়ায় তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কবে শেষ হবে? বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ করতে চাইবে কারণ মানুষের লোভ সীমাহীন। এ লোভ নিয়ন্ত্রণ করে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বার্থ রক্ষা করে বাজার স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রশাসন বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। লাগামহীন এই বাজার দরের সব দায় কি সিন্ডিকেটের? প্রশ্ন থেকে যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে