শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

'ভালো লাগে না' একটি মানসিক ব্যাধি

নাদিয়া আফরোজ, শিক্ষার্থী, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়
  ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
'ভালো লাগে না' একটি মানসিক ব্যাধি

মন প্রফুলস্ন থাকলে ভালো লাগা প্রতিটি কাজই সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হয়। আমরা যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি, তখন আমাদের মন এক সজীবতার দেয়ালে লেগে থাকলেও কিছু সংখ্যক মানুষের বিকাল গড়াতে না গড়াতেই মন যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। প্রায় ৬০% মানুষ এই 'ভালো না লাগা' সমস্যায় ভুগছে। ছোটবেলার আমার 'পণ' কবিতাটি প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনে মেনে চলার চেষ্টা করে। সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি কিন্তু সারাদিন ভালো হয়ে থাকার জন্য একটা শপথ গ্রহণ করা হলেও' মন ভালো না থাকার 'কারণে শপথটা যেন রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সপ্তাহে খুব কম মানুষের যায় 'পুরো সময় মন প্রফুলস্ন থাকে। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, 'ভালো লাগে না' এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। এতে আক্রান্ত পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেশি। এই ব্যাধি থেকে পরিত্রাণের জন্য মনোবিদ চিকিৎসকের পরামর্শ অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 'ভালো লাগে না' বা 'মন ভালো লাগে না' এই সমস্যাটি ঘরকোণের মধ্যে পড়ে আছে। একটা জরিপ করলে দেখা যাবে যে, বেকার তরুণ-তরুণী, সঙ্গীহীন শিক্ষার্থী, প্রেম বিচ্ছেদ তরুণ-তরুণী, অবিবাহিত নারী-পুরুষ, পারিবারিক অশান্তি, আর্থিক সংকট, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, শরীরের হরমোনগত সমস্যা, প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহার, ইত্যাদি মানুষগুলো এ সমস্যায় সাধারণত বেশি ভোগে। বর্তমানে অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে আসক্ত দিন দিন বেড়েই চলছে। হোক ভালো কাজ কিংবা মন্দ কাজ। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য মানুষ অনলাইনের কাজ ও সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে। যার ফলে যন্ত্র নির্ভরতা মানুষগুলো আবেগহীন হয়ে পড়ছে। একটা বড় ধরনের বাস্তব আবেগীয় যোগাযোগের শূন্যস্থান হয়ে যাচ্ছে। না কারও অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করা যাচ্ছে, না কাউকে সহানুভূতি দেখানো যাচ্ছে। সরাসরি কথাবার্তার যোগাযোগ অর্থাৎ অফলাইনে একে অপেরকে বুঝতে সক্ষম। অনেক সময় দেখা যায়, যখন কোনো ব্যক্তির মন ভীষণ খারাপ থাকে তখন তার কলিগ বা সহপাঠীকে ম্যাসেনজার বা হোয়াটসঅ্যাপে নক দিয়ে কথা বলতে চায়, কিন্তু বিপরীত ব্যক্তির এক দুইটা কান্নার ইমোজি দিয়ে সান্ত্বনা আর বা কখনো ব্যস্ততার কারণে ম্যাসেজ সিন না করার ফলে সমস্যার ব্যক্তিটি তার ম্যাসেজের উত্তর পাওয়ার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। তার এই অপেক্ষা একটা সময় 'কাছের মানুষ ভাবতে থাকা' মানুষ থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই এই ব্যাধি থেকে বেরিয়ে মানসিক শান্তি পেতে হলে প্রথমে অনলাইনের যন্ত্রনির্ভর সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে অফলাইনে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া। তারপর পছন্দের কাজগুলোকে দিনের মাঝামাঝি অংশে রাখা। যেমন, বই পড়া, ছবি আঁকা, রান্না করা ইত্যাদি। তাছাড়া শারীরিক ব্যায়াম শরীর ও মনকে সতেজ রাখে।' ভালো না লাগা' ব্যাধিকে অনেকাংশেই মন থেকে বিতাড়িত করে দেয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের নির্মল হাওয়া মনকে প্রফুলস্ন রাখতে সাহায্য করে। তাই মাঝেমধ্যে দূরে অথবা কাছে কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ধর্মীয় অনুশাসন মেনে জীবন পরিচালনা করা। অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যার কারণেও নারীরা এই মুড সুইং ব্যাধিতে ভুগছে আবার হরমোনগত সমস্যার কারণে যেহেতু 'মুড সুইং' ব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেক্ষেত্রে বিশেষ করে নারীদের গাইনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। মন ভালো না থাকলে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্তকেও গ্রহণ করতে পিছপা হয় না। আর যেসব নারী-পুরুষ ইন্ট্রোভার্ট তাদের পক্ষে এই ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসা দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই, 'ভালো লাগে না' নিপাত যাক সুস্থ দেহে সুন্দর মন জায়গা পাক এ রকম স্স্নোগানের আলোকে জীবন পরিচালনা করে আলোকিত হোক, মন হোক সজীব ও সতেজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে