বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মেধা পাচার রোধে কার্যকরী উদ্যোগ জরুরি

আহমেদ জুনাইদ তন্ময় শিক্ষার্থী আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ
  ২১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪১
মেধা পাচার রোধে কার্যকরী উদ্যোগ জরুরি
মেধা পাচার রোধে কার্যকরী উদ্যোগ জরুরি

বলা হয়ে থাকে দক্ষ জনশক্তিকে একটি দেশের প্রধান সম্পদ। তাই প্রতিটি দেশেরই লক্ষ্য থাকে তার জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা। সেই দক্ষ জনশক্তির যখন ঘাটতি শুরু হয় স্বভাবতই তখন একটি দেশ যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে এবং শুরু হয় অরাজকতা, দুর্নীতি, আন্দোলন ইত্যাদি। তাহলে এই দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কি করা উচিত? এই প্রশ্ন প্রায় সবার মনেই, প্রতিবছর অনেক টাকার বাজেট হচ্ছে নতুন করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়, বাংলাদেশ কেন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারছে না? সমস্যাটা হচ্ছে মেধা পাচার। অনুন্নত ও উন্নয়শীল দেশগুলোতে খুবই প্রচলিত একটি শব্দ আছে 'ব্রেন ড্রেন' বা মেধা পাচার। যখন উন্নতর জীবনযাপন কিংবা উচ্চতর গবেষণার জন্য উন্নত দেশে পাড়ি জমায় এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, সেটিই ব্রেন ড্রেন বা মেধা পাচার। মেধা পাচার প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্যই হুমকিস্বরূপ। তবে অনুন্নত ও উন্নয়শীল দেশগুলোর জন্য বড় হুমকি। দেশের মেধাবী মানুষগুলো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, উন্নত গবেষণা, উচ্চতর নাগরিক সুবিধা না পায় তখনই তারা পারি জামায় ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে। একজন মেধাবী মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারে। তবে যখন এসব মেধাবী নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যান, তখনই তার দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার এই প্রবণতা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনেস্কোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী যা ২০২২ সালে ছিল ৪৯ হাজার জন। বিগত কয়েক বছরে দেখা যায়, কোনো বছরই এই সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে না। মানসম্মত শিক্ষা, শিক্ষা-পরবর্তী সহজে চাকরি পাওয়ার সুযোগ, উন্নত জীবনব্যবস্থাসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর লোভনীয় স্কলারশিপসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়। এ জন্য এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। ফলে তারা পড়াশোনা শেষ করে অধিকাংশ আর দেশে ফেরেন না। কিন্তু দেশের মেধা পাচারের পেছনের মূল কারণ কী? যেসব সুযোগ-সুবিধার জন্য মানুষ দেশ ছাড়ছে, সেগুলো কী বাংলাদেশ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে? দুঃখজনক হলেও সত্যি, দেশে মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। ইউনেস্কোর পরামর্শ, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। সেখানে বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করেছে জিডিপির ১.৬৯ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ১.৭৬ শতাংশ। দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় না হয় মানলাম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের পরিস্থিতির কথা যদি বিবেচনা করি, শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো পরিবেশ কী সরকার আদৌ তৈরি করতে পেরেছে? বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের নির্বাচন করা হয়? সরকারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি এই কর্ম কমিশন, যার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচন করা। এখানেও নেই কোনো স্বচ্ছতা, সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে কর্ম কমিশনের নিয়োগ বাণিজ্যের বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র। এ ছাড়াও রয়েছে কোটা বৈষম্য, সংবিধানের ২৯ (ক) অনুচ্ছেদের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হাইকোর্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। সরকারি চাকরি ক্ষেত্র ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। যা দেশের মেধাবীদের আরও বেশি করে উদ্ভুদ্ধ করবে দেশ ছাড়ার জন্য। বাংলাদেশকে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন মেধা পাচার বন্ধ করা। মেধা পাচার রোধে সর্বপ্রথম থাকতে হবে মেধাবী ব্যক্তির ব্যক্তিগত সদিচ্ছা। দ্বিতীয়ত, মেধা পাচার রোধে যে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে, তা হচ্ছে মেধাবীদের মূল্যায়ন, গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত অর্থের বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাক্ষেত্রে আধিপত্যের রাজনীতি দূরীকরণ, শিক্ষার মান্নোয়নে মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ এবং ভালো বেতনের নিশ্চয়তা এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া। বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বন্ধ করা, নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশ মেধাবীদের মূল্যায়ন করে তাদের দেশের মেধা পাচার রোধ করেছে। তাদের মধ্যে তুরস্ক, চীন, জাপান পেরেছে মেধা পাচার রোধ করতে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও এ দিক দিয়ে সফলতার দারপ্রান্তে, তবে মেধা পাচার একেবারে রোধ করতে পারেনি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ এখনো চেষ্টা শুরুই করেনি। বাংলাদেশের উচিত, মেধাবীদের ফিরিয়ে আনতে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ব্রেন কোরিয়া (বিকে-২১) প্রকল্পের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া। এতে করে মেধাবীরা দেশে ফিরবে এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করবে, আমাদের দেশে বুয়েট, রুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বাইরে থেকে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসি অথচ আমাদের দেশের মানুষই বিদেশের বড় বড় প্রকল্পে কাজ করছে। বিষয়টি খুবই লজ্জার? সর্বোপরি, বাংলাদেশের উচিত, একটি আদর্শ, স্মার্ট, জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধা পাচার রোধ করতে যুগোপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং মেধা পাচার রোধ করা।

আহমেদ জুনাইদ তন্ময়

1

শিক্ষার্থী

আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে