বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে এর বেহাল অবস্থা দেখে পর্যটক কেন আমি নিজেও হতবাক। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন এই সমুদ্রসৈকতে শত শত কুকুরের উৎপাত, হকার, নোংরা ও গন্ধে ভরপুর ঘোড়া ও বাইকের দৌরাত্ম্যে পর্যটকরা অতিষ্ঠ এবং ক্ষুব্ধ।
সম্প্র্রতি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যেতে পারে যে, দেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও এই সমুদ্রসৈকত কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক মানের গড়ে উঠেনি। জেলা প্রশাসনের চরম অবেহলা ও উদাসীনতা এবং টুরিস্ট পুলিশের নজরদারির অভাবে গোটা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। অথচ প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। তবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে উড়ন্ত বালুর জন্য বসা বা রিলাক্স করা যায় না। এরপরও পর্যটনশিল্পকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত অনেক হোটেল-মোটেল ছাড়াও সৈকতের কাছেই কয়েকটি পাঁচতারা হোটেল রয়েছে। সেবা প্রদানে যথেষ্ট অবহেলার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলগুলোর অবস্থা বেহাল।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত অবস্থিত। এর পূর্বে রয়েছে মিয়ানমার এবং ভারত সীমান্ত, দক্ষিণে রয়েছে বিশাল বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ সাধারণত কোনো বিদেশি পর্যটকদের এখন পর্যন্ত আকর্ষণ করতে পারছে না। গোটা সমুদ্রসৈকতের অনেক এলাকা মনে হয় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র আবর্জনায় ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ, যা দেখার কেউ নেই। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতটি ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। সমুদ্রসৈকতটি এত নোংরা এবং অস্বাস্থা্যকর ও অপরিচ্ছন্ন, যা কোনো শিল্পীর পক্ষেও ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। বলার অবকাশ রাখে না যে, সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ করে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতায় সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট হতে সারমর্ম বিচ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ডাবের খোসা, ময়লা ও খালি পানির বোতল, চিপসের খালি প্যাকেট, চিনা বাদামের খোসা, আজে বাজে ময়লার স্তূপ দেখে আমি নিজেই ক্ষুব্ধ। এরপর সমুদ্রসৈকত সন্নিকটে ভাতের হোটেল ও ঝুপড়ি দোকানের ময়লা পরে থাকতে দেখা যায়। ইহা কি পৌরসভা বা জেলা প্রশাসকের চোখে পরে না। হকার, ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালাদের দৌরাত্ম্যে সৈকতে পর্যটকরা সুন্দরভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে সমুদ্র বিনোদন উপভোগ বা ঘোরাঘুরি করতে পারছে না। এতে চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় স্ত্রী-মেয়েদের নিয়ে পড়তে হয়। জানা যায়, সৈকতের উন্নয়ন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ভিক্ষুক-হকারমুক্ত রাখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসক, বিচ ম্যানেজমেন্ট ও টুরিস্ট পুলিশের দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত কোনোভাবেই যেন বিদেশি সি-বিচের মতো গড়ে উঠতে এবং বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারছে না। তবে কক্সবাজার শহরটি দারুণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখে পর্যটক কেন আমি নিজেও অনেক অনেক খুশি।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে যেমন সমস্যা আছে, ঠিক তেমনি রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনাও। কিন্তু সঠিক নির্দেশনা বা সৈকত নীতিমালা না থাকার কারণে বছরের পর বছর অনেকটাই অবহেলিত হয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকতসহ এই অঞ্চলের পর্যটন স্পষ্টগুলো। পাশাপাশি দূষণের কারণে দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য। দুর্নীতি ও অনিমের কারণে কক্সবাজার পৌরসভার বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ থাকার জন্য সি-বিচ এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন এবং পরিচ্ছন্নতা এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো থাকার কারণে বড় ধরনের তেমন দূর্ঘটনা ঘটেনি। কক্সবাজার শহরে রোহিঙ্গাদের বিবিধ কর্মকান্ডে বিশেষ করে মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী তৎপরতাসহ হরেক রকমের অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই, তবে প্রশাসন সচেতন। বাংলাদেশের নিরাপওার স্বার্থে কক্সবাজার সেনানিবাস বা ক্যান্টনমেন্টকে আরও আধুনিকতা ও শক্তিশালীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। এখানে কোনো অবহেলাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই কক্সবাজারকে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে বদ্ধপরিকর থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইহা নজরে আনছে না। প্রয়োজনে আগামী ১০ বছরের জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত বা জাপানের কাছে কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতের আধুনিকতার জন্য লিজ দিলে এতে করে পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি এই শিল্প বিকাশের যথেষ্ট উন্নতি ও আধুনিকতার ছোঁয়া পড়বে। বাড়বে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক। তারা সি-বিচটিকে একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে উন্নত সেবা দিতে কারপর্ণ করবে না। বাড়বে সরকারের রাজস্ব এতে কোনো সন্দেহ নেই। আরও বাড়বে দেশীয় মুদ্রার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সার্ফিয়ের জন্য খুবই উপযোগী। সমুদ্রের কোনো একটি পয়েন্টে যদি সার্ফার জোন প্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং তা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়, তাহলে এই খাত থেকেও প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। তবে দুর্নীতিই কক্সবাজার জেলার সব রকম উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। শহরে রোহিঙ্গাদের আগমন ভালো লাগেনি। এ শহরের আধুনিকতা ও শৃঙ্খলার বড়ই প্রয়োজন। পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কক্সবাজার পর্যটনশিল্পকে অবিলম্বে বিদেশিদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করার ওপর জোর দিচ্ছি।
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা