শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি

যেহেতু ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্ট গত দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে- তাই ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিনিধিও এ কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্ছনীয় হবে।
মো. আনোয়ার হাবিব কাজল
  ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ১৭ অক্টোবর, ২০২৪-এ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাংলাদেশের সংস্কারের জন্য আরও চারটি কমিশন গঠন করেছে, এগুলো হলো স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম উন্নয়ন কমিশন, শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশন এবং মহিলা বিষয়ক কমিশন এবং তাদের প্রধানের জন্য বিশিষ্ট নাগরিকদেরও নিয়োগ করেছে। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করে এবং তাদের প্রধান হিসেবে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই কমিশনগুলো হলো- নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নেতৃত্বের গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচু্যত করার তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বলছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজগুলো করে নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারই ধারাবহিকতায় এ পর্যন্ত ১০টি কমিশন গঠন হলেও অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় আজ পর্যন্ত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়নি বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

শিক্ষা সংস্কার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যকীয় একটি কমিশন কেন গঠন হয়নি তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ইতোমধ্যে তৈরি হতে শুরু করেছে। আমরা সবাই জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে সবার আগে জাতিকে সুষ্ঠু সবলভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার গত ষোলো বছরে শিক্ষা এবং বিচার ব্যবস্থাসহ দেশের সব সংস্থার অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই, কাল বিলম্ব না করে সব স্ট্যাক হোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা এখন সময়ের দাবি।

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিধ্বস্ত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্ট বারবার আওয়াজ তুলেছে এবং যত দ্রম্নত সম্ভব বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার, শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।

অনতিবিলম্বে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় শিক্ষা সংলাপের আয়োজন করে। তাছাড়া শিক্ষানীতি, শিক্ষা কারিকুলাম ও মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে এনসিটিবি'র চেয়ারম্যান ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের নেতারা। আগামীতে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও এ বিষয়ে মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্টের। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ অক্টোবর বিকালে বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের একটি প্রতিনিধি দল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. বিধান রঞ্জন পোদ্দারের সঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক এবং ট্রাস্ট মডেল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল নূরে আলম তালুকদার। সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দল উপদেষ্টাকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা জরুরি বলে তাগিদ দেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ও প্রিন্সিপাল নূরে আলম তালুকদার বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা সেই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে পেরেছি। তাই, এখন সময় এসেছে দেশকে ঢেলে সাজানোর। সরকার যেহেতু ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাই কালবিলম্ব না করে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা জরুরি।

১০টি কমিশন গঠনের পর এবার শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ দাবি জানিয়েছেন খোদ সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন। বিএনপি আমলের এই প্রতিমন্ত্রী পরীক্ষা হলে নকল বন্ধে বেশ আলোচিত ছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এডুকেশন টাইমস আয়োজিত 'কোন পথে শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষাক্রম সংস্কার' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এ পর্যন্ত ১০টি কমিশন গঠন হলেও কোনো শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়নি- যা দুঃখজনক। অথচ আমরা একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন আশা করে ছিলাম।

বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট গত ২৪ বছর অর্থ্যাৎ দুই যুগ যাবত দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে, ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সারাদেশের ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ্যাধিক ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে। এছাড়া করোনাকালে অসহায় দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করে। মতবিনিময়কালে ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য এবং গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো. ফারুক হাসান, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারেক রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী দলের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম জিয়া, বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আনোয়ার হাবিব কাজল বক্তব্য রাখেন।

স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠন করা হলেও তা যথাযথ সুফল বয়ে আনতে পারেনি। আমরা চাই, এই দফায় একটি শিক্ষা কমিশন গঠন হবে- যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। আমাদের দেশের শিক্ষা খাতকে সমৃদ্ধ করে ভরিয়ে তুলছে এমন উজ্জ্বল বিশেষজ্ঞ শিক্ষক আছেন প্রচুর, কিন্তু সেই শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশ শিক্ষার হাব তৈরি করেছে, যেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে যাচ্ছে- যার মাধ্যমে দেশের মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও নষ্ট হচ্ছে।

তাই, এখন সময় এসেছে দেশকে সাজানোর। যেহেতু সরকার ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাই বিলম্ব না করে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। আমরা চাই, এই পর্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হোক- যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে শিক্ষা সংস্কারে কাজ করবে। দেশে নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং আদর্শবান সুনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে খুব শিগগিরই একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।

যেহেতু ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্ট গত দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে- তাই ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিনিধিও এ কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্ছনীয় হবে।

মো. আনোয়ার হাবিব কাজল : সাংবাদিক ও জনসংযোগ পরিচালক, বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে