বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

একের পর এক মৃতু্য সড়ক নিরাপদ হবে কবে?

  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
একের পর এক মৃতু্য সড়ক নিরাপদ হবে কবে?

প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর খবর জানা যায়- যা কতটা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই- ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে; তখন সার্বিক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা অনুধাবন করা জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কুমিলস্নায় বিদু্যতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটর সাইকেল আরোহী তিন কিশোর নিহত হয়েছে। রোববার রাত ১টার দিকে আদর্শ সদর উপজেলার গোমতী নদীরপাড় পালপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের মোটর সাইকেলটি সড়কের পাশের বিদু্যতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। এছাড়া, নাটোরে ঘন কুয়াশার কারণে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ দুজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। এদিকে, একসঙ্গে ছয়টি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টার দিকে সদর উপজেলার নওপাড়া ডালসড়ক এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের জুটমিলের সামনে একসঙ্গে ছয়টি ট্রাকের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। তথ্য মতে, সোমবার সকালে ঘন কুয়াশা থাকায় কম দূরত্বের বস্তুও দেখা যাচ্ছিল না। নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের জুটমিলের সামনে প্রথমে বিপরীতমুখী দুইটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এরপর একে একে ছয়টি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

আমরা বলতে চাই, শুধু এই ঘটনাগুলো নয়, প্রতিনিয়ত সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে, যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া নৌপথ, রেল এসব দুর্ঘটনায়ও মানুষ নিহত হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিনিয়ত সড়কে যে দুর্ঘটনার বীভৎস চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই; তেমনি এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার, এর আগে বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাবসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। ফলে, সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

1

আমরা বলতে চাই, এবারের ঘটনাগুলো এবং এর আগে নানা সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে তা বিবেচনায় রেখে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বিবেচনায় নেওয়া দরকার, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, দুর্ঘটনার উলেস্নখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বৃদ্ধি, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রম্নটি, যানবাহনের ত্রম্নটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণ সামনে এসেছে। ফলে, এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই।

সর্বোপরি বলতে চাই, পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়কের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়, যেখানে প্রতিনিয়তই মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এছাড়া, মনে রাখা দরকার, নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে- যা কাম্য হতে পারে না। একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক নিরাপদ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে