বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
স্মরণীয়-বরণীয়

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কবি। তিনি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ্বে আবির্ভূত আধুনিক বাংলা কবিদের অন্যতম। উলঙ্গ রাজা তার অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থ লেখার জন্য তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ২ কার্তিক ১৩৩১ বঙ্গাব্দে (১৯ অক্টোবর, ১৯২৪) তারিখে ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে। এই খ্যাতিমান কবির শৈশব কেটেছে পূর্ববঙ্গে, ঠাকুরদা আর ঠাকুমার কাছে। কবির ঠাকুরদা কর্মজীবন কাটিয়েছেন কলকাতায়। কর্মজীবন শেষে ৫০ বছর বয়সে কলকাতার পার্ট চুকিয়ে বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাড়ি চান্দ্রা গ্রামে চলে আসেন। তার বাবা কলকাতাতেই ছিলেন। কলকাতার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি কাজ করতেন। দুই বছর বয়সে কবির মা বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান। কবি থেকে যান তার ঠাকুরদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে। প্রাথমিক লেখাপড়া ফরিদপুরের পাঠশালায়। পরে ঠাকুরদার মৃতু্যর পর গ্রাম ছেড়ে ১৯৩০ সালে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। কলকাতায় এসে প্রথমে কলকাতার বঙ্গবাসী স্কুলে এবং পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে 'প্রবেশিকা পরীক্ষা'য় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট পলস্‌ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বিএ পাস করেন। ছাত্রাবস্থাতেই 'শ্রীহর্ষ' পত্রিকার সম্পাদনা করে সংবাদপত্রের প্রতি তার নিবিড় ও গভীর অনুরাগের সূত্রপাত হয়। 'উলঙ্গ রাজা' কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে 'সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার' পাওয়া ছাড়াও একগুচ্ছ পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে। ১৯৫৮ সালে 'উল্টোরথ পুরস্কার', ১৯৭০ সালে 'তারাশঙ্কর স্মৃতি' ও ১৯৭৬ সালে 'আনন্দ শিরোমণি' পুরস্কার পান কবি। ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি'লিট প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ৯৪ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মাত্র ৫ বছর বয়সে প্রথম কবিতা লেখেন। কিন্তু সেটা কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। ১৬ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখে এসেছেন। 'দৈনিক প্রত্যহ' পত্রিকায় সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। 'সত্যযুগ' পত্রিকার সাংবাদিক রূপে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৫১ সালে যোগ দিয়েছিলেন 'আনন্দবাজার' পত্রিকায়। দীর্ঘ সময় সম্পাদনা করেছেন 'আনন্দমেলা' পত্রিকা। প্রথম কবিতার বই 'নীল নির্জন', প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। এরপর প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা 'অন্ধকার বারান্দা', 'নীরক্ত করবী', 'নক্ষত্র জয়ের জন্য', 'আজ সকালে'সহ অসংখ্য কবিতার বই। মানুষের কবি ও মানবতার পূজারি নীরেন্দ্রনাথ তার কবিতায় মানুষকে দেখেছেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একাধিক গল্প ও উপন্যাসও লিখেছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তার সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্রের নাম ভাদুড়ী মশাই। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ৯৪ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

\হ

1
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে