বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

অরক্ষিত নৌপথ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

  ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অরক্ষিত নৌপথ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

এ কথা বলা দরকার, অপেক্ষাকৃত কম খরচে মালপত্র পরিবহণে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলো নৌপথ। আর বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ডাকাতি চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি নৌপথ অরক্ষিত হয়ে ওঠে তবে তা কতটা উদ্বেগজনক এবং শঙ্কার তা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির কারণে অরক্ষিত হয়ে উঠছে নৌপথ। ডাঙার মতো পানিতেও দৌরাত্ম্য অপরাধ চক্রের এটাও আলোচনায় আসছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নৌপথে প্রায়ই ঘটছে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি। জাহাজ মালিক, সুকানি ও শ্রমিকদের ভাষ্য, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, হাতিয়া, ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেটের বেশ কিছু স্পটে জলপথে চাঁদা তোলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ডাকাতদের মারধরের শিকার হতে হয় অনেককে। ফলে, সার্বিকভাবে যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

উলেস্নখ্য যে, সম্প্রতি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ঈশানবালায় মেঘনা নদীতে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের এমভি আল-বাখেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজের সাতজনকে হত্যার ঘটনায় ফের নৌপথের সুরক্ষার বিষয়টি সামনে এসেছে। আর নৌপথ সুরক্ষার বিষয়ে যেসব তথ্য আসছে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা, নৌপথ অরক্ষিত হলে তা কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে সেটিও সহজেই অনুমেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেশ কিছু এলাকার নৌরুট রীতিমতো আতঙ্কের। তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য চাঁদপুরের হাইমচর, দশআনী, মাঝেরচর, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জের কলাকাইট্যা, পদ্মা নদীর শিবচর ও মাওয়া এলাকার একাধিক পয়েন্ট, মেঘনা ব্রিজের নিচ থেকে সিলেট যেতে ৪-৫টি জায়গা, হাতিয়া, ইলিশা ও ভৈরব। এছাড়া, মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলার পাশ দিয়ে মেঘনা নদীর প্রায় ২২ কিলোমিটার বয়ে গেছে। মোংলা বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী জাহাজ এই রুটে যাতায়াত করে। পণ্যবাহী যানবাহন প্রায়ই মেহেন্দীগঞ্জের ভাবনির চর ও উলানিয়ার মলিস্নকপুর অতিক্রম করার সময় ডাকাতের কবলে পড়ে।

1

আমরা বলতে চাই, জাহাজের সাতজনকে হত্যার ঘটনায় ফের নৌপথের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে আলোচনা আসছে, তথ্য জানা যাচ্ছে তা আমলে নিতে হবে গুরুত্বসহকারে। একইসঙ্গে নৌপথের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও কোনো বিকল্প নেই। অনেকেই জানিয়েছেন সিলেট থেকে বাল্কহেডে মালপত্র নিয়ে চাঁদপুর পর্যন্ত আসতে সাধারণত তিন দিন লাগে। নিয়ম অনুযায়ী, বাল্কহেড ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত চলাচল করে। আর অন্য নৌযান জোয়ার-ভাটা মেনে পাড়ি দেয়। একটি মালবাহী জলযানকে সিলেট থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত আসতে নানা জায়গায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। বড় ধরনের বিপদ এড়াতে অধিকাংশ সময় ৮-১০টি জাহাজ বহরে চলাচল করে থাকে। তখন এসব জাহাজে গণচাঁদা তোলা হয়। আবার আলাদাভাবে কোনো জাহাজ চলাচলের সময় চাঁদাবাজি ও ডাকাত চক্রের কবলে পড়ে। ফলে, এসব তথ্য পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা অপরহিার্য।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডাকাতি চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি নৌপথ অরক্ষিত হয়ে ওঠে, তবে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এমন তথ্যও সামনে আসছে যে, ডাকাতদের ভয়ে ভৈরব থেকে কোনোরকম মালপত্র লোড ও যাত্রী বহন করছিল না ট্রলার। ফলে, এই ধরনের ঘটনা কতটা শঙ্কার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া এটাও এড়ানো যাবে না যে, তথ্য মতে, গত তিন মাসে ৫টির মতো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি নৌকায় ডাকাতি হয়েছে। ১১ ও ১২ অক্টোবর ডাকাতরা ধাওয়া দেয় কয়েকটি নৌযানকে। সঙ্গত কারণে সার্বিকভাবে যে তথ্যগুলো উঠে আসছে তা আমলে নিতে হবে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নৌপথকে সুরক্ষিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে