দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির তীব্র চাপ অনুভব করছে- এমন বিষয় এর আগে আলোচনায় এসেছিল- যা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে লাগামহীন মূল্যস্ফীতির বিষয়টি জানা যাচ্ছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, মাছ-মুরগি-ডিমের দাম বাড়তে থাকায় বেশ আগেই নিম্নবিত্তের খাদ্য তালিকা থেকে স্বল্পদামের প্রোটিনজাত খাদ্য এক রকম বাদ পড়েছে বলে জানা যায়। ভাত-রুটির সঙ্গে অল্পদামি সবজি আর পাতলা ডালই অধিকাংশ পরিবারের নিত্য আহার্য হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে এবার সরু চালের সঙ্গে পালস্না দিয়ে মোটা চালের দামও হু হু করে বাড়তে থাকায় টান পড়েছে স্বল্পআয়ের মানুষের ভাতের থালায়। নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে কেবল তিন বেলা ভাত জোটানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। ছক বাঁধা খাবারে চালিয়ে নিতেই কমে আসছে জীবনের আঁচ। ফলে, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি।
আমলে নেওয়া দরকার, বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেও নিম্ন আয়ের মানুষ কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় যে লাল আমন চাল কিনেছেন, তা এখন ৬৯ থেকে ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চালের কেজি এখন ৬২ টাকা- যা দুই সপ্তাহ আগে ৫৮ টাকা ছিল। মানভেদে মোটা স্বর্ণা চাল বর্তমানে ৫২-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা আগে ৫০-৫৫ টাকা ছিল। এছাড়া, লক্ষণীয়, গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মিনিকেট চালের দাম ১৭ ভাগ বেড়েছে। একই সময়ে পাইজামের দাম বেড়েছে ১৫ ভাগ এবং মোটা চালের ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ। অর্থাৎ মুনাফাখোররা বেশি লাভ সেখানে করছে, যে পণ্য গরিব ও মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে এবং বাজারে বেশি বিক্রি হয়। যা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক। এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায়ও দুর্বলতা দেখা গেছে। ফলে, এই বিষয়গুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্ট বিষয় আমলে নেওয়া দরকার, অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা। ২০১৯ সাল থেকে খাদ্যমূল্য বিবেচনা করলে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক। এছাড়া এটা এড়ানো যাবে না, আয় কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। এছাড়া, ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। গরিবের আয় বাড়েনি। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়ছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে, এই বিষয়গুলো সার্বিকভাবে কতটা উদ্বেগের সেটা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, আমরা বলতে চাই, এর আগে, এমন আলোচনায় উঠে এসেছিল যে, মূল্যস্ফীতির পেছনে বিশ্ববাজারের প্রভাব আছে যেমন, তেমনি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনারও ত্রম্নটি আছে। কারণ হিসেবে সামনে এসেছিল, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ হয় না। ফলে, এই দিকগুলো আমলে নিতে হবে। সিন্ডিকেট আছে, আছে মধ্যস্বত্বভোগী- এই আলোচনাও নানা সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অভিযোগও উঠেছে। স্মর্তব্য, বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর; ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। কিন্তু এটা এড়ানো যাবে না, আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন। দুই বছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির প্রভাব আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি, আমরা বলতে চাই, যদি নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এমনটি স্বাভাবিক। এর আগে এমনটিও জানা গিয়েছিল, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না অনেকের। ফলে, যখন খবরে উঠে আসছে লাগামহীন মূল্যস্ফীতির বিষয়টি তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবে এমনটি কাম্য।