স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি জরুরি। কেননা, জনপ্রতিনিধি না থাকলে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়। জনসাধারণ প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, জনপ্রতিনিধি না থাকায় জন্ম ও মৃতু্যসনদ, প্রত্যয়নপত্র পাওয়াসহ নানা ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। তাই এই সংকটের সমাধান জরুরি। তথ্য মতে, স্থানীয় সরকার বিভাগে কোনো কাজেই গতি আসছে না। সরকার পতনের পর অনেক জনপ্রতিনিধি পালিয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করায় স্থবির হয়ে পড়ে স্থানীয় সরকার কার্যক্রম। অন্যদিকে, সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের কারণে আরেকটি বড় ধাক্কা লাগে মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে দুটি ভিন্ন স্থান থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। রুটিন কাজও সঠিকভাবে চালানো যাচ্ছে না। দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সংস্কার, স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সনদ প্রদানসহ সেবামূলক কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ফলে, যত দ্রম্নত সম্ভব সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জনগণ সেবাবঞ্চিত হলে তা কতটা শঙ্কার তা অনুধাবন করা জরুরি। তথ্য মতে, স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিন মাস পরপর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডে সম্মেলন কক্ষটি পুড়ে যায়। এখন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক করার মতো সভাকক্ষ নেই। এছাড়া, গত ছয় মাসে একটিও আন্তঃমন্ত্রণালয় কোনো বৈঠক হয়নি। অগ্নিকান্ডের পর পুরো এক মাস কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বসার জায়গাই ছিল না। তড়িঘড়ি করে ডিএসসিসি নগর ভবনের ১৩ থেকে ১৫ তলার ৭৫টি কক্ষ খালি করা হয়। সেখানে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর কিছু কর্মকর্তা পুড়ে যাওয়া ভবনের দ্বিতীয় তলায় অফিস করছেন। এ ছাড়া আগুন লেগে অনেক ফাইল পুড়ে যাওয়ায় দ্রম্নত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ডেঙ্গুর প্রকোপে গত কয়েক বছর ধরে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হয়েছে। জানা যাচ্ছে, নগরীগুলোয় নামকাওয়াস্তে চলছে মশক নিয়ন্ত্রণসহ পরিচ্ছন্নতা কাজ। যা শঙ্কার। বর্তমানে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে প্রশাসক বসানো হয়েছে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কোনো তদারকি নেই। আর শুধু মশক নিধন বা পরিচ্ছন্নতার বিষয় নয়, স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে পড়ায় দেশজুড়ে অনেক সড়ক বেহাল বলেও জানা যাচ্ছে। পৌরসভার প্রায় চার হাজার জনপ্রতিনিধি না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সেবা কার্যক্রমও। সঙ্গত কারণেই সার্বিক দিক গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রম্নত সংকট নিরসন এবং জনগণ যেন সঠিকভাবে সেবা পায় সেই দিকটিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সর্বোপরি, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে এবং নানা ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ; এটি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। উলেস্নখ্য, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হয়নি। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পলাতক। স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে দেশের ৪ হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১ হাজার ৪১৬টির চেয়ারম্যান পলাতক ছিলেন। অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন অনেকে। প্রকাশ্যে যারা আছেন, তাদের কর্মতৎপরতা নেই বললেই চলে। সামগ্রিকভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে কোনো কাজেই গতি আসছে না- এই সংকট আমলে নিয়ে তা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।