বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। যেখানে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জের বিষয়। তাই যে কোনো প্রেক্ষাপটে রোগী ভোগান্তি সৃষ্টি হলে সেটা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। প্রসঙ্গত, খবরে প্রকাশ- পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। রোববার রোগীর আত্মীয়স্বজনের সকাল শুরু হয় ভোগান্তি দিয়ে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন না, দেখা মেলেনি জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদেরও। রোগীর স্বজনের ভাষ্য, হাসপাতালে সেবা বন্ধ করে আন্দোলনের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আমরা মনে করি, যে কোনো যৌক্তিক দাবি উত্থাপন হোক এবং দাবি জানানোর বিভিন্ন পন্থা রয়েছে। কিন্তু রোগীদের জিম্মি করা বা রোগীরা যে কোনো ধরনের দুর্ভোগের শিকার হবে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা অমানবিক। চিকিৎসকরা মানবিক সেবায় নিয়োজিত। তারা যদি রোগীদের দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণ হয়- সেটা দুঃখজনক এবং শঙ্কারও। যা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি দিলে তা কতটা ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, তা অনুধাবন করা জরুরি। জানা যায়, কর্মবিরতির কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে সেবাবঞ্চিত হন রোগীরা। নানা অসুখে অনেক রোগী যন্ত্রণায় কাতরালেও চিকিৎসক না থাকায় সেবা পাননি। কেউ চিকিৎসক না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে গেছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে আসা রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে- এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে।
উলেস্নখ্য, রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস তাদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তাদের ভাষ্য, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না। বিএমডিসির এই আইনের বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। গত ১৩ বছরে এই রিটের শুনানি ৯১ বার পেছানো হয়েছে। রায় দীর্ঘায়িত করে আইনের ফাঁক দিয়ে 'ডাক্তার' পদবি লেখার অভিপ্রায়ে আরও দুটি রিট করা হয়েছে। তারা এই রায়ের দীর্ঘসূত্রতা চান না। অন্যদিকে, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে লং মার্চ টু হাইকোর্ট কর্মসূচি পালন করা হবে এবং এরপরও যদি দাবি আদায় না হয়, তাহলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগের (ওটিসি) তালিকা হালনাগাদ, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ফার্মেসিকে ওটিসি লিস্টের বাইরে কোনো ওষুধ বেচতে না দেওয়া, ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরে।
আমরা বলতে চাই, যে কেউ তার দাবি জানাবে বা যৌক্তিকতা তুলে ধরবে। কিন্তু কোনোভাবেই রোগীদের দুর্ভোগের মুখে ফেলে নয়। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশের অনেক পরিবার দরিদ্র। নানা সময়ে অভিযোগ এসেছে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতেও নতুন করে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে একেকটি পরিবার। অন্যদিকে, দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটও রয়েছে। রোগীর ঠিক মতো সেবা না পাওয়া, নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আবার যদি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি করে আর এতে রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হন- তবে তা অত্যন্ত শঙ্কার।
সর্বোপরি, এটা আমলে নেওয়া দরকার যে, চিকিৎসার মতো সেবামূলক খাতে কর্মবিরতি কোনো সমাধান হতে পারে না। দাবি আদায়ে যৌক্তিক উপায়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। কিন্তু রোগীদের জিম্মি করা বা চিকিৎসার মতো পেশায় থেকে রোগীদের দুর্ভোগের মুখে ফেলবে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। সামিগ্রক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির বিষয়ে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।