মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

সরকারি ক্রয় খাত জিম্মি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সরকারি ক্রয় খাত জিম্মি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

অনিয়ম, দুর্নীতি, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সারাজাতি যখন প্রতিবাদমুখর তখন সরকারি ক্রয় খাতে জিম্মি দশা কিংবা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তা সার্বিকভাবে উদ্বেগজনক। ফলে, এ সংক্রান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সময়ক্ষেপণ না করে তা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো অজুহাতে এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। জানা যায়, সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) ব্যবস্থায় বাজার দখল, ঠিকাদারদের যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। পর্যবেক্ষণে তারা বলেছে, সরকারি ক্রয় খাত জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারি ক্রয় খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। আর এই লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে হবে। স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা সুপারিশও করেছে টিআইবি। সেগুলোও বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

উলেস্নখ্য, সুপারিশে বলা হয়েছে, যুগ্ম উদ্যোগ (জেভি) ফার্মগুলোর কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যালোচনার জন্য স্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে ঠিকাদারদের যোগসাজশ ও বাজার দখলের প্রবণতা রোধ করতে হবে। যে ঠিকাদার এককভাবে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, তাকে জেভি গঠনের অনুমতি দেওয়া যাবে না। ঠিকাদারদের জন্য বাজার শেয়ারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের নিয়মনীতি ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস সংশোধন করে সব কোম্পানি ও জেভির প্রকৃত মালিকানা তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে। ই-জিপি পস্ন্যাটফর্মের বাইরে থাকা উচ্চমূল্যের প্রকল্পগুলোকে ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় আনতে হবে।

আমরা মনে করি, এসব সুপারিশ বিবেচনায় রাখার পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং প্রকৃত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রাখাও জরুরি। টিআইবির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১১ সালে ই-জিপি চালুর পর থেকে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ অনুমোদিত চুক্তির মূল্য ৮৮১ কোটি টাকা হলেও এর চেয়ে বড় চুক্তিগুলো এই পস্ন্যাটফর্মের আওতায় আনা হয়নি। এছাড়া, শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্প মূল্যের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন, যেখানে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ ঠিকাদারের দখলে রয়েছে মাত্র ১ শতাংশেরও কম বাজার। এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা, এমন আলোচনাও হচ্ছে- স্থানীয় সরকার বা মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে ঠিকাদারদের হাতবদল হয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ একই থেকে যায়! এছাড়া টিআইবি'র পর্যবেক্ষণ- আমলাতন্ত্র, ঠিকাদার এবং রাজনৈতিক শক্তির ত্রিপক্ষীয় আঁতাতে সরকারি কেনাকাটার 'বাজার দখল' প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। যা অত্যন্ত পরিতাপের এবং উদ্বেগজনক।

সরকারি ক্রয়খাত সারাবিশ্বেই সবচেয়ে দুর্নীতিপ্রবণ। কিন্তু বাংলাদেশে তা নিয়ন্ত্রণহীন দখলদারিত্বের হাতে জিম্মি দশায় নিমজ্জিত হয়েছে- এমনটি জানা গেলে, পরিস্থিতি কতটা শঙ্কার সেটা অনুধাবন করা জরুরি। এছাড়া, ২০১৮ সালের টিআইবির একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয় খাতের দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য মোট ক্রয় বাজেটের ২৭ শতাংশ পর্যন্ত অপচয় হয়! ফলে, ই-জিপি ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষতি কমিয়ে আনা, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা, সরকারি ক্রয় খাতে দুর্নীতি রোধসহ ব্যয়িত অর্থের সর্বোচ্চ সুফল পেতে পদক্ষেপে জোর দিতে হবে।

সর্বোপরি, নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য বার বার সামনে আসে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। এখন যখন জানা যাচ্ছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি নির্দিষ্টগোষ্ঠী প্রকল্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে, প্রতিযোগিতার সুযোগ কমে যাচ্ছে তখন বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে