শিল্পের বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকার ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ এবং নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার প্রবণতা জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। সে কারণে ঋণখেলাপিরা জাতীয় অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়া, দেশে ক্রমাগত খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের রেকর্ড হয়েছে। তথ্য মতে, ডিসেম্বরের প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২০ দশমিক ২ শতাংশ। আলোচ্য সময় শেষে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতি ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন গভর্নর।
বলা দরকার, ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তা একে একে খেলাপি হয়ে পড়েছে- যা অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। আমরা মনে করি, এই বাড়তি চাপের বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকবিলায় পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গোপন রাখা খেলাপির সঠিক তথ্য প্রকাশের উদ্যোগ নিলে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেরিয়ে এসেছে বলে জানা যায়। এর আগে ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ খেলাপি রেকর্ড ছিল সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা- যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। ফলে, তিন মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ কোটি টাকা।
বলা দরকার, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র পরিলক্ষিত হলেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি উদ্বেগের। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ একটি বড় বাধা। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। সাবেক সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখানো হতো। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে, আগামী দিনে খেলাপি ঋণসহ যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।
এটাও আলোচনায় এসেছে যে, যতই নতুন তথ্য আসছে ততই বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। গর্ভনর জানিয়েছেন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন করা হবে। যেসব ব্যাংকে একীভূত করার দরকার সেগুলো একীভূত করা অথবা নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে এসে পুনর্গঠন করা হবে। তাছাড়া, আইনগত সংস্কার হচ্ছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন রিভিউ হচ্ছে। আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণ এবং সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
সর্বোপরি, বর্তমান বিশ্বে ব্যাংকিং খাত কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না। এই খাতের যে কোনো অনিয়ম দেশের সার্বিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। সঙ্গত কারণেই ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং সব ধরনের অনিয়ম রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের রেকর্ড হয়েছে- এটি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।