মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

সহিংসতার শিকার নারী যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

  ০১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
সহিংসতার শিকার নারী যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

নারীর সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যাহত হলে তা কতটা উদ্বেগজনক বলার অপেক্ষা রাখে না। নারীর প্রতি সহিংসতা, অবমাননা বা নির্যাতন- পরিবার ও সমাজে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এছাড়া, দেশে ধর্ষণসহ নানামাত্রিক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। খবরে প্রকাশ, দেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনে একবার হলেও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গত এক দশকে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ- যা এড়ানো যাবে না। তথ্য মতে, ২০১৫ সালে যৌন সহিংসতার হার ছিল ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) প্রকাশিত ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন সার্ভের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

আমলে নেওয়া দরকার, জরিপে চার ধরনের সহিংসতার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো, শারীরিক সহিংসতা, যৌন, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতা। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী তাদের জীবনসঙ্গী বা স্বামীর সহিংসতার শিকার! জরিপে দেখা যায়, নারীদের অন্য কারোর তুলনায় তাদের স্বামীর কাছ থেকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা তিন গুণ বেশি এবং যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি। অন্যদিকে, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭.৪ শতাংশ আইনের আশ্রয় নেন। বাকি ৯৩.৬ শতাংশ নারী এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন না। এছাড়া, সহিংসতার শিকার ৬৪ শতাংশ নারী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কারো সঙ্গে শেয়ার করেন না।

আমরা বলতে চাই, নারীর অগ্রগতি, শিক্ষার প্রসারসহ যত কিছুই হোক না কেন, তা ফলপ্রসূ হবে না- যতক্ষণ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে। নারীরা সহিংসতার শিকার- এই বিষয়টিকে সামনে রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশে এতটাই প্রকট যে, প্রায় ৭০ শতাংশ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতার যে ভয়াবহ চিত্র তা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে নারীর যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

এই আলোচনা উঠে এসেছে যে, মানসিকতার কারণে ভায়োলেন্স বাড়ে। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে মানসিক পরিবর্তন দরকার। আমরা মনে করি, নারীর প্রতি সহিংসতা সামাজিক অবক্ষয়কে স্পষ্ট করে। ফলে মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। সুশিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। এ কথাও জানা যায়, যৌন সহিংসতা সবচেয়ে বেশি শহরে। শহরে এই হার ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে এটিও আমলে নিতে হবে।

সর্বোপরি, দেশের বিভিন্ন খাতে অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না। সমাজে নারীর নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি লজ্জাজনক এবং শঙ্কার। এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একইসঙ্গে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে