গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, যিনি গাবো নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন কলম্বীয় সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকাশক ও রাজনীতিবিদ এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। 'নিঃসঙ্গতার একশ বছর' বইয়ের লেখক হিসেবে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। কলম্বিয়ার সন্তান গার্সিয়া মার্কেস জীবনের বেশিরভাগ সময় বসবাস করেছেন মেক্সিকো এবং ইউরোপের বিভিন্ন শহরে। তিনি ১৯২৭ সালের ৬ মার্চ কলম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের কাছে আরাকাটাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এই বিশ্ব বিখ্যাত কলম্বীয়, স্প্যানীয় ভাষী ঔপন্যাসিক বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সাহিত্যবিশারদদের মতে তিনি হোর্হে লুইস বোর্হেস এবং হুলিও কোর্তাসারের সঙ্গে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দক্ষিণ আমেরিকান কথাসাহিত্যিক। একই সঙ্গে জনপ্রিয় এবং মহৎ লেখক হিসেবে চার্লস ডিকেন্স, লেভ তলস্তয় ও আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে তার নাম এক কাতারে উচ্চারিত হয়। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সময় সুইডিশ একাডেমি এমন মন্তব্য করেছিল যে, তার প্রতিটি নতুন গ্রন্থের প্রকাশনা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মতো। জনমানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তিনি ছিলেন বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল প্রবাদপ্রতীম। ১৯৪০ উচ্চবিদ্যালয়ে পড়তে বন্দরনগর বারানকুইলস্না যান। ১৯৪৭ সালে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এ সময় তার দুটি ছোট গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গার্সিয়া মার্কেস ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে আইন পড়া বন্ধ করে এল এস্পেক্তাদোর সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা শুরু করেন। গার্সিয়া মার্কেস তার পেশাজীবন শুরু করেন আঞ্চলিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার মাধ্যমে। তিনি অপ্রচলিত লেখক এবং সাংবাদিকদের দল হিসেবে পরিচিত বারানকিইয়া গ্রম্নপে যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি তার পরবর্তী সাহিত্যজীবনের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। সবচাইতে ব্যবসাসফল উপন্যাস 'নিঃসঙ্গতার একশ বছর'। সারা বিশ্বে ২৫টি ভাষায় অনূদিত হয়ে ১৯৬৭-২০১৪ এই ৪৫ বৎসরে প্রায় ৫ কোটি কপি বিক্রি হয়। তিনি জীবনের শেষ দুই যুগ ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচেছিলেন। এ সময় তার লেখালেখি কমে আসে; জনসংযোগ ও ভ্রমণ হয়ে পড়ে সীমিত। এমনকি ২০০২-এ আত্মজীবনীর প্রথম খন্ড লিভিং টু টেল আ টেইল প্রকাশের পর পরিকল্পিত ২য় এবং ৩য় খন্ড আর রচনা করা হয়ে ওঠেনি। তিনি দুরারোগ্য লিম্ফেটিক ক্যানসারে ভুগছিলেন। ২০১২-র জুলাই থেকে তিনি স্মৃতি বিনষ্টিতে আক্রান্ত হন। তিনি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল মেক্সিকো শহরে ৮৭ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।