আমার পরিচয়
\হ
৩। জয় বাংলাকে বজ্রকণ্ঠ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : জয়বাংলার প্রেরণাসঞ্চারী স্স্নোগানে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের শক্তি ও সাহস পেয়েছিল বলে জয় বাংলাকে বজ্রকণ্ঠ বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই যুদ্ধে এক অসাধারণ প্রেরণাদায়ী শক্তি ছিল জয়বাংলা স্স্নোগান। এই স্স্নোগানে পুরো জাতি একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছে। তাই এই স্স্নোগানকে বজ্রকণ্ঠ বলা হয়েছে।
৪। 'কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম' বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : 'আমার পরিচয়' কবিতায় 'কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম' বলতে বাঙালির আনুমানিক ১০৭০-১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোক যে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাস তা কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। রাজা মহীপালের বিরুদ্ধে অনন্ত-সামন্ত-চক্র মিলিত হয়ে এই কৈবর্ত বিদ্রোহের সূচনা করে। দিব্য বা দিব্বোক এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। বাঙালি জাতির বিদ্রোহের ঐতিহ্য বোঝাতে এই উদাহরণটি উলেস্নখ করা হয়েছে 'আমার পরিচয়' কবিতায়।
৫। 'একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : 'একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি'- পঙ্ক্তিটি দ্বারা বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে বোঝানো হয়েছে।
বাঙালি সংগ্রামী জাতি। চিরকালই বাঙালি জাতি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বিজয় লাভ করেছে। সংগ্রামের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কেউ কখনো রুখতে পারে না। বাঙালির এই সংগ্রামী চেতনা দেশপ্রেমের স্বাক্ষর বহন করে।
৬। বাঙালি কীভাবে বর্তমান অবস্থানে এসেছে?
উত্তর : সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় বাঙালি বর্তমান অবস্থানে এসেছে।
আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন বাঙালি জাতির স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার পেছনে আছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। সহজিয়াপন্থি বৌদ্ধ কবিদের সৃষ্ট চর্যাপদের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের পরিচয় মুদ্রিত হয়ে আছে। সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে বাঙালিরা যুগে যুগে নানান চড়াই-উতরাই পার করেছে। এর ফলে নানান আন্দোলন, বিপস্নব-বিদ্রোহ আর মতাদর্শের বিকাশ হতে হতে বাঙালি পৌঁছেছে বর্তমান অবস্থানে।
৭। কবি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে এসেছেন কীভাবে?
উত্তর : চর্যাপদে যে অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের পরিচয় মুদ্রিত হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় কবিও এই বাংলায় এসেছেন।
বাঙালি জাতি অসাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম। কবিও এই বাঙালি জাতিরই একজন। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বুকে লালন করেন। আর এই চেতনা এসেছে চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে। চর্যাপদের অক্ষরগুলোতে অসাম্প্রদায়িক বাঙালির বীজ নিহিত ছিল। এই চেতনার ধারাবাহিকতা থেকে কবি এসেছেন।
৮। বাঙালি জাতিসত্তা সৃষ্টিতে চর্যাপদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : চর্যাপদ অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।
বাঙালি একটি অসাম্প্রদায়িক জাতি। এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই একই জাতিসত্তার চেতনায় বিশ্বাসী। আর তা হলো বাঙালি জাতিসত্তা। আর এই জাতিসত্তার বীজ রোপিত হয়েছিল চর্যাপদের মধ্যে। সহজিয়াপন্থি বৌদ্ধ কবিগণ চর্যাপদে বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তাই বাঙালি জাতিসত্তা সৃষ্টিতে এই চর্যাপদের ভূমিকা অপরিসীম।
৯। 'আমার পরিচয়' কবিতায় কবি কৈবর্ত বিদ্রোহের উলেস্নখ করেছেন কেন?
উত্তর : 'আমার পরিচয়' কবিতায় কবি বাঙালি জাতির বিদ্রোহের ইতিহাস বোঝাতে কৈবর্ত বিদ্রোহের উলেস্নখ করেছেন।
বাঙালি জাতি সংগ্রামী জাতি। তারা যুগ যুগ ধরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। জীবন বাজি রেখে অন্যায়কে রুখে দিয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে। শাসকদলের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। বাঙালির এই বিদ্রোহের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে কৈবর্ত বিদ্রোহ। তাই কবি 'আমার পরিচয়' কবিতায় এই কৈবর্ত বিদ্রোহের উলেস্নখ করেছেন।