সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
২. জারিফের দাদির অনেক দিন ধরে খুসখুসে কাশি এবং প্রতিদিন বিকেলের দিকে জ্বর আসে। ক্রমেই শুকিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তিনি বলেন, সহজে এ রোগ প্রকাশ পায় না। জীবাণুগুলো শ্বেত রক্ত কণিকাকে পরাস্ত করে রোগ প্রতিরোধক্ষক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটি বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ।
ক) ব্রংকাল কাকে বলে?
খ) রাত্রিবেলা গাছের নিচে ঘুমানো বিপজ্জনক কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ) জারিফের দাদির রোগ, রোগের কারণ ও লক্ষণগুলো উলেস্নখ করো।
ঘ) ওই রোগের জন্য দায়ী জীবাণুকে কিভাবে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সমাজে এ রোগ নির্মূল করা যায়? সে ক্ষেত্রে তোমার ভূমিকা উলেস্নখ করো।
উত্তর:
ক) শ্বাসনালির শেষ অংশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যে শাখা নালি গঠন করে, তাদের ব্রংকাস বলে।
খ) রাতের বেলা সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ থাকে, তাই অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় না। অন্যদিকে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা শ্বসনপ্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। ফলে শ্বসনপ্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের উৎপাদন চলতে থাকে। এ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস পাতার স্টোমাটার মাধ্যমে পরিবেশে বের হয়ে যায়। পরিণত কান্ডের বাকলে যে লেন্টিসেল তৈরি হয় তার মাধ্যমেও এসব গ্যাসের বিনিময় হয়। এ জন্য বড় গাছের নিচে রাতে ঘুমালে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
গ) জারিফের দাদি যক্ষ্ণা রোগে আক্রান্ত। যক্ষ্ণা একটি পরিচিত বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ। গুপড়নধপঃবৎরঁস :ঁনবৎপঁষড়ংরং নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়।
লক্ষণ:
র. দীর্ঘদিন ধরে খুসখুসে কাশি ও বুকে ব্যথা হয়।
রর. ভগ্ন স্বর, ওজন হ্রাস এবং ক্ষুধা মন্দা।
ররর. হাঁপানি, ঘন ঘন জ্বর আসা।
রা. বারবার ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়া দ্বারা সংক্রামিত হওয়া।
া. হাড়ে ব্যথা অনুভব, দুর্বলতা, কোনো গ্রন্থি অবশ হয়ে যাওয়া, জন্ডিস দেখা দেওয়া।
ঘ) উদ্দীপকের রোগটি হলো যক্ষ্ণা। সমাজ থেকে যক্ষ্ণা বিতাড়িত করতে নিম্নলিখিত প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে রোগটি নির্মূলে কাজ করতে গেলে তা ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করতে হবে।
প্রতিকার ব্যবস্থা
র. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
রর.এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ নিবারণের নিয়মগুলো কঠিনভাবে মেনে চলতে হবে। এ জন্য পরিবার ও সমাজের সবাইকে সহযোগী হতে হবে।
ররর. রোগীকে হাসপাতালে বা স্যানোটেরিয়ামে পাঠানো বেশি নিরাপদ।
রা. রোগীর ব্যবহারের সব কিছু পৃথক রাখতে হবে।
া. রোগীর থুথু মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এই মারাত্মক রোগের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে গেলে শিশুদের যক্ষ্ণা প্রতিষেধক বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। শিশুদের জন্মের পর থেকে এক বছরের মধ্যে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। আর টিকার প্রয়োজনীয়তা টিভি, যোগাযোগমাধ্যম বা মাইকিং ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজে সবাইকে অবহিত করতে হবে। বর্তমানে দেশের সব টিকাদান কেন্দ্রে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা ছাড়া নিয়মিত ক্যাম্পেইন করেও আমরা রোগটি নির্মূল করতে পারি।
৩. শিপন সাহেব একজন প্রকৃতিপ্রেমি যুবক। শীতকালের এক সকালে তিনি দেখতে পেলেন যে আশে পাশের গাছ থেকে পাতা ঝরে যাচ্ছে। তিনি আরো খেয়াল করলেন যে তার উঠছে।
(ক) কোষ কাকে বলে?
(খ) কোষের প্রকারভেদ বর্ণনা কর।
(গ) উদ্দিপকে উলেস্নখিত গাছে যে ধরণের কোষ বিদ্যমান তার চিত্র অংকন করে অঙ্গানুগুলো চিহ্নিত কর।
(ঘ) উদ্দিপকের গাছের পাতার কোষ ও হাতের চামড়ার কোষ এক নয়- ব্যাখা কর।
উত্তর:
(ক) জীবদেহের গঠন ও কাজের একককে কোষ বলে।
(খ) নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরণের।
যথা:
১. আদিকোষ: এ ধরণের কোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই। এদের দেহ রাইবোজোম থাকে, ক্রোমোজোমে থাকে। অন্যান্য কোষীয় আঙ্গানু অনুপস্থিত।
২. প্রকৃত কোষ: এ ধরণের কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে। কোষীয় সকল উপাদান মাইটোকন্ডিয়া, পস্নাজমিক, এন্ডোপস্নাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি উপস্থিত থাকে।
(গ) গাছের পাতার কোষ প্রকৃত কোষ। প্রকৃতকোষের উদ্ভিদকোষ গাছের পাতয় বিদ্যমান। নিচে উদ্ভিদকোষের চিত্র অংকন করে অঙ্গানু চিহ্নিত করা হল।
পস্নাজমাডেজমাটা পস্নাজমা মেমব্রন কোষপ্রাচীর ক্লোরোপস্নাস্ট কোষগহ্বর মাইটোকন্ড্রিয়া সাইটোপস্নাজম মসৃণ এন্ডোপস্নাজমিক জালিকা রাইবোজম নিউক্লিয়াস নিউক্লিয়ার রক্ত নিউক্লিয়ার আবরণী নিউক্লিওলাস গলজি বস্তু অমসৃণ এন্ডোপস্নাজমিক জালিকা।
চিত্রে: গাছের পাতার কোষ।
(ঘ) উদ্দিপকে উলেস্নখিত গাছের পাতা ও হাতের চামড়া উভয়ই প্রকৃতকোষী। তবে গাছের পাতা উদ্ভিদকোষ ও হাতের চামড়া প্রাণীকোষ এর অন্তর্গত।
গাছের পাতার কোষ (উদ্ভিদকোষ): উদ্ভিদকোষ দেহে যে কোষ থাকে তাকে উদ্ভিদ কোষ বলে। এটি উদ্ভিদের গঠন ও কার্যের একক। উদ্ভিদকোষ বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গানু নিয়ে গঠিত। উদ্ভিদকোষে কোষ প্রাচীর থাকে। পস্নাসিড থাকে যা খাদ্য উৎপাদনে সাহায্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থও থাকে। উদ্ভিদ কোষে কোষ গহ্বর থাকে।
হাতের চামড়ার কোষ (প্রাণীকোষ): প্রাণীদেহে যে কোষ থাকে তাকে প্রাণী কোষ বলে। প্রাণীকোষ মাইটোকন্ডিয়া, নিউক্লিয়াস, ক্রোমাটিড, মাইক্রোভিলাস ইত্যাদি কোষীয় অঙ্গানু নিয়ে গঠিত। উদ্ভিদকোষে পস্নাসিড থাকলেও প্রাণীকোষে পস্নাস্টিড থাকে না। আবার প্রাণীকোষের কোষ গহ্বর উদ্ভিদকোষের তুলনায় ছোট। তাই বলা যায়, গাছের পাতার কোষ ও হাতের চামড়ার কোষ এক নয়।