শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নবিদ্ধ টিভি নাটক

বিনোদন রিপোর্ট
  ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
'চিটার অ্যান্ড জেন্টলম্যান' ধারাবাহিক নাটকের একটি দৃশ্য

বাংলাদেশের ড্রয়িংরুমকেন্দ্রিক বিনোদনের বড় মাধ্যম ছোট পর্দা। আর এই ছোট পর্দার অন্যতম প্রধান বিনোদন জোগায় টিভি নাটক। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে টিভি নাটকের ধারা। গত কয়েক বছর ধরেই সস্তা গল্প, ভাষার বিকৃতি, অশালীন সংলাপ আর কুরুচিপূর্ণ নাম ও মাত্রাতিরিক্ত ভাঁড়ামির কারণে বাংলাদেশি নাটক দেখা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছেন আধুনিক ও রুচিশীল দর্শক। এত কিছুর পরও টিভি নাটকের নির্মাণ থেমে নেই। চ্যানেলগুলোর খোরাক জোগাতে প্রতিদিনই নির্মাণ ও প্রচার হচ্ছে একাধিক একক ও ধারাবাহিক নাটক। স্বল্প বাজেটের এসব নাটকের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে অশ্লীল দৃশ্য। অনেকটাই সিনেমার আদলে রগরগে শয্যা দৃশ্য, অভিনেত্রীর শরীরের বিশেষ অঙ্গে ক্যামেরা জুম করা, গালাগাল- সবই স্থান পাচ্ছে দেশীয় টিভি নাটকে। এসব কারণে আরেক দফা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এর মান নিয়ে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউটিউব ও ওটিটি পস্ন্যাটফর্ম। টেলিভিশন চ্যানেলকে একবার প্রচারের স্বত্ব দেওয়ার পর আবার সেই নাটকটি বিক্রি হচ্ছে ওটিটি পস্ন্যাটফর্মে। আবার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশের মাধ্যমে আজীবন আয়েরও একটি সুযোগ খুলেছে।

কিন্তু তরুণ নির্মাতারা বলছেন একটি ভালো নাটক বানানোর জন্য যে বাজেট দরকার, তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, নাটক থেকে আয়ের সূত্র নানা জায়গা থেকে হলেও সেই অনুপাতে তারা সম্মানী পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে ডিরেক্টর'স গিল্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলিক বলেন, 'নাটকের বাজেট একেক সময় একেক রকম হয়। সময়ের প্রেক্ষাপটে বাজেট নির্ধারণ হয়ে থাকে। তবে আমার মতে, একটি নাটক নির্মাণে বাজেট কখনই বেঁধে দেওয়া উচিত নয়। ভালো কাজের জন্য ভালো বাজেটই রাখা উচিত। আর এখন ডিজিটাল মাধ্যমেও আয় করা সম্ভব। তাই বাজেট কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ নেই। তার পরও অনেকেই কম বাজেটে নাটক করছেন। মানও তেমন ভালো হচ্ছে না। এসব নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। অন্যদিকে একটি নাটক ইউটিউব ও ওটিটি পস্ন্যাটফর্মে আজীবন ব্যবসা করবে, সেই তুলনায় নির্মাতারা বাজেট পাচ্ছেন না।'

এক সময় প্রতিটা নাটক প্রিভিউ কমিটিতে দেখার পর প্রচারের অনুমতি মিলত। এখন সেই চিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। এজেন্সিনির্ভর ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার পর এখন ক্ষমতার আসনে মার্কেটিং টিম। সেখান থেকেই ব্যবসায়িক চুক্তি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই চলে এলো ইউটিউবনির্ভর ব্যবসা। একদিকে যে যার মতো নাটক নির্মাণ করে তা ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মে প্রকাশ করছে। আবার সেই পথে হাঁটছে টিভি চ্যানেলগুলোও। পর্দায় প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে। তাই নাটক এখন শুধুই ভিডিও কনটেন্ট। আর চলছে ভিউ গোনার প্রতিযোগিতা।

এসব বিষয়ে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এখনও চেষ্টা করছে নাটকের মান ঠিক রাখার। আমাদের দর্শকদেরও এখানে দায়িত্ববোধের জায়গা রয়েছে। ছোটবেলা থেকে যদি বাচ্চাদের সংস্কৃতিবোধ তৈরি করতে পারি, তাহলে সেই ভবিষ্যতে একজন রুচিশীল দর্শক হবে। তারা দেখছেন বলেই কিন্তু মানহীন নাটকের ভিউ বাড়ছে। পাশাপাশি যারা নাটক নির্মাণ বা অভিনয় করছেন তাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকায় থাকাটা জরুরি।

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, 'ভালো-মন্দ দুই ধরনের নাটকই হচ্ছে। তবে ভালোর তুলনায় মন্দ নাটকের সংখ্যা অনেক কম। এখন এত পরিচালক আর নাট্যকার। একটা দেশের এত প্রতিভা ভাবাই যায় না। কিন্তু সেই প্রতিভাগুলো একটু শিখে আসলে ভালো হতো। কিন্তু সেদিকে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তারা শুধু বানাতে চায়। সেজন্যই মানের এই অবস্থা। ইদানীং অভিনয়শিল্পীরাও নাট্যকার হয়ে যাচ্ছেন। এই বিষয়টি ভয়ঙ্কর। এই কাজটা তো তার নয়। তার কাজ অভিনয় করা। গল্প লেখা মনে হয় এখন খুব সহজ হয়ে গেছে। তাই সব কিছুর এই অবস্থা।'

অভিনয় শিল্পীসংঘের সাবেক সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, 'নাটকের সংখ্যা এখন বাড়ছে ঠিকই কিন্তু সেটি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এক সময় দেখা যাবে টেলিভিশন নাটকে কাজও কমছে। কারণ এখন ওটিটির যেই জনপ্রিয়তা তৈরি হচ্ছে, সেখানকার কনটেন্ট নিয়ে দর্শক সন্তুষ্ট। সেখানে ভালো বাজেট রয়েছে, নির্মাতা ভালো কাজ করছে। এরই মধ্যে সেই জোয়ার কিন্তু চলছে। তাই যারা মান দিয়ে টিকতে পারবে না, তারা শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে