শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ট্র্যাজিডি কিংয়ের জন্মদিন আজ

বিনোদন ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দিলীপ কুমার

উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। অনেক নামে ডাকা হয় চলচ্চিত্রের এই ধ্রম্নবতারাকে। ভারতীয় সিনেমার মুভি মোগল, নায়কদের নায়ক এমনকী ট্র্যাজিডি কিংসহ নানা উপাধি ও বিশেষণ তার। আজ এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের ১০২তম জন্মদিন। ১৯২২ সালের আজকের দিনে (১১ ডিসেম্বর) অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে স্থানটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়ালার অন্তর্ভুক্ত।

উপমহাদেশের সিনেমায় দিলীপ কুমার ছিলেন অনন্য অসাধারণ এক অভিনেতা। বলা যায় ভারতীয় সিনেমার দারুণ এক সংযোজন তিনি। দিলীপ কুমারকে হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কার বিজয়ী হওয়ায় তার নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ ও ২০১৫ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করে।

নাম-যশ-খ্যাতির আড়ালে এই কিংবদন্তি অভিনেতার আরও একটি ইতিহাস আছে। তার আসল নাম মহম্মদ ইউসুফ খান। দেখতে বেশ সুদর্শন ছিলেন ইউসুফ খান। সিনেমার প্রতি অদম্য নেশা ছিল। এ কারণে প্রায়ই ছুটে যেতেন সিনেমার শুটিং দেখতে। কখনো একা, আবার কখনো কলেজের সহপাঠী রাজ কাপুরের সঙ্গে। এভাবেই আসা-যাওয়ার মধ্যে একদিন বলিউডের তৎকালীন সুপারস্টার দেবিকা রানীর চোখে পড়েন। তিনি ইউসুফের কাছে জানতে চান উর্দু পারেন কিনা? পাকিস্তানি শুনেই দেবিকার পরের প্রশ্ন ছিল- তুমি অভিনেতা হতে চাও কি-না। দিলীপ কুমারের জবাবের পরই বদলে যেতে থাকে তার ইতিহাস।

ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তখন ধর্ম কিংবা নামের একটি বিষয় ছিল। স্বভাবতই মুসলিম কোনো নামকে তারা নিতে পারবেন না। এমনটিই ধারণা ছিল দেবিকা রানীর। তিনি এটাও জানতেন, ইউসুফ খান নামটি একজন রোমান্টিক হিরোর জন্য মানানসই হবে না। এ বিষয়ে সুপরিচিত হিন্দি কবি নরেন্দ্র শর্মার সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জাহাঙ্গীর, ভাসুদেব ও দিলীপ কুমার- এ তিনটি নাম প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে 'দিলীপ কুমার' নামটিই পছন্দ করেন নিজের জন্য। নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ইউসুফ খানেরও বেশ আগ্রহ ছিল। তার রক্ষণশীল বাবা তার এই নতুন পেশার কথা যেন না জানতে পারেন। কারণ তার বাবা সিনেমা জগতের মানুষদের নিয়ে তামাশা করতেন।

মুসলিম নাম বদলে হিন্দু ঘরানার নাম গ্রহণ করলেও পুরো ক্যারিয়ারে দিলীপ কুমার মাত্র একবার মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সে ছবির নাম 'মুঘল ই আযম'। এরপর আর কোনো ছবিতে তাকে মুসলমান চরিত্রে দেখা যায়নি। অবশ্য এসব বিষয় কখনো তার ভাবনাতেও ছিল না। বলিউডে থিতু হওয়ার পর দিলীপ কুমারের জীবনেও প্রেম এসেছিল একাধিকবার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৬৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। বেশিরভাগই রোমান্টিক গল্পে। ব্যক্তি জীবনেও বেশ রোমান্টিক ছিলেন তিনি। প্রেমিকাদের নিয়ে বেশ কয়েকবার খবরের শিরোনামও হয়েছিলেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের মতে, অভিনয়ের প্রথম দিকে দিলীপ কুমার নাকি কামিনী কুশলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু কামিনীর দাদা মেনে নিতে পারেননি ওই সম্পর্ক। আচমকা কামিনীর বোনের মৃতু্যর পর তার বোনের স্বামীকে বিয়ে করেন ওই অভিনেত্রী। ক্যারিয়ারের প্রথম প্রেমেই ধাক্কা খান দিলীপ কুমার। এই ধাক্কা সামলে নিতে শরণাপন্ন হন মধুবালার।

মধুবালা ছিলেন অভিনেতা ও গায়ক কিশোর কুমারের স্ত্রী। কিশোরের সঙ্গে বিয়ের আগে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিলেন দিলীপ কুমারকে। চেয়েছিলেন তাকে বিয়ে করতে। কিন্তু পারেননি। ক্যারিয়ারের ইগো আর মধুবালার বাবার কূটচালের কাছে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। অনেকটা অভিমান ও দিলীপ কুমারের ওপর ক্ষোভ নিয়েই পরে কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন মধুবালা। কিন্তু সুখী হননি। ৯ বছর টিকে ছিল তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক। রোগেশোকে ভুগে মারা যান কোটি পুরুষের স্বপ্নের রানী মধুবালা। দিলীপ কুমার নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আতাউলস্না (মধুবালার বাবা) এই সম্পর্কটাকে একটা বিজনেস ভেঞ্চার হিসেবে ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন; যার জেরে অসন্তুষ্ট হয়ে মধুবালার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তিনি।

মধুবালার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বেশ কিছুদিন নিজেকে সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন দিলীপ কুমার। এরপর সায়রা বানুর সঙ্গে পরিচয় হয়। দিলীপ কুমারের ওপর আগে থেকেই আকর্ষণ ছিল সায়রা বানুর। সেই কারণেই ২২ বছর বয়সের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সায়রা বানু তার গলায় মালা পরান। সম্পর্কটা এখানেই স্থায়ী হতে পারত কিন্তু হয়নি। সায়রা বানুকে বিয়ের পর ফের আসমা নামে এক পাকিস্তানি মহিলার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্কে জড়ান দিলীপ কুমার। ফলে ভেঙে যায় দিলীপ-সায়রা সংসার। এরপর আসমাকে বিয়ে করেন দিলীপ। কিন্তু সেটাও টেকেনি। বিয়ের দু'বছরের মধ্যেই আসমার সঙ্গে দিলীপ কুমারের দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। আসমা তাকে 'ঠকাচ্ছেন'- এ অভিযোগেই দূরে সরে যান দিলীপ। আসমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ফের সায়রার কাছেই ফিরে যান তিনি। আবারও তারা বিয়ে করে সংসারী হন। জীবনের শেষ পর্যন্ত সায়রাই ছিলেন দিলীপের প্রেম, আশ্রয়, ঠিকানা, পরিচয়, সেবিকা। সায়রা ক্যারিয়ার, খ্যাতি সব ছেড়ে দিলীপ কুমারের বুকেই স্বর্গের সুখ খুঁজে নিয়েছিলেন। প্রায়ই তিনি বলতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিধাতার কাছে তিনি চিরকৃতজ্ঞ কোহিনূর রূপে দিলীপ কুমারকে তার কাছে পাঠানোর জন্য।

দিলীপ কুমারের সাফল্য কিংবা অর্জনের তালিকা অনেক লম্বা। প্রায় ছয় দশকের ক্যারিয়ারে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সবচেয়ে বেশি পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও তার নাম রয়েছে। ফিল্ম ফেয়ার আটবার পেয়েছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। মনোনীত হয়েছেন ১৯ বার। ফিল্ম ফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন ভারত সরকারের সম্মাননা পদ্মভূষণ ও দাদা সাহেব ফালকে। পাকিস্তান সরকার তাকে ভূষিত করেছে 'নিশান-এ-ইমতিয়াজ' সম্মাননায়। কিন্তু ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তার ভাগ্যে জোটেনি।

বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ৭ জুলাই ৯৮ বছর বয়সে ভারতের মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান এই কিংবদন্তি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে