শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন কাটল নেত্রী নিপুণের দু'বছর

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারে যখন স্টারমার্ক হিসেবে দেখা যাবে তিনি দু'বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন, তখন তার যোগ্যতা নিয়ে কারোরই কোনো সংশয় থাকে না। ঢাকাই চলচ্চিত্রের তেমনই এক অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার; যিনি তার অভিনয়ের জন্য দু'বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রথমবার ২০০৭ সালে শাহ আলম কিরণের পরিচালনায় করা 'সাজঘর' সিনেমার জন্য এবং দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালে মুহম্মদ হান্নান পরিচালিত 'চাঁদের মতো বউ' সিনেমার জন্য।

২০০৬ সালে 'রত্নাগর্ভা মা' নামে একটি সিনেমা দিয়ে প্রথম পা রাখেন চলচ্চিত্রে নিপুণ আক্তার। তবে অনেকের জীবনেরই যেমন আছে তার প্রথম ছবিটি কোনোদিন আলোর মুখ দেখেনি, নিপুণ আক্তারের ওই 'রত্নাগর্ভা মা' সিনেমাটিও তেমনি যা আজও পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। তবে ওই বছরেই করা 'সাজঘর' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য নিপুণ আক্তার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে যান। ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ারের শুরুতেই গর্ব করার মতো এমন একটি পুরস্কার খুব বেশি অভিনয় শিল্পীর ক্যারিয়ারে ঘটেনি।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার একজন শিল্পীর জন্য কত বড় ওজনের সেটা যিনি এটা অর্জন করেছেন তিনিই বুঝতে পারেন আর যিনি সারা জীবন অভিনয় করেও একটিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পেয়েছেন তিনিই এই না পাওয়ার বেদনা বুঝতে পারেন।

সেই বিবেচনায় নিপুণ আক্তারের চলচ্চিত্রের বাইরে থেকে নতুন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা না থাকারই কথা। তারপরেও নিজের কথা না ভেবে তিনি নিজের সহকর্মী তথা ইন্ডাস্ট্রির অভিনয় শিল্পীদের স্বার্থে ২০২১ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়েন। ভোটের ময়দানে তিনি অভিনেতা জায়েদ খানের সঙ্গে পেরে না উঠলেও নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে এই অভিযোগে তিনি জায়েদ খানের বিরুদ্ধে মামলা ঠুঁকে দেন। তবে এই মামলার রায় উপর্যুপরি জায়েদ খানের পক্ষে গেলেও নাছোড়বান্দা নিপুণ আক্তার বারবারই আপিল করে শেষপর্যন্ত তার পক্ষে রায় নিয়ে আসেন। তার আগে এ নিয়ে দীর্ঘদিন নিপুণ আক্তার এবং জায়েদ খানকে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। তখন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব সামলান অভিনেতা সায়মন সাদিক।

এখন সাইমন সাদিক এবং নিপুণ আক্তার- এ দু'জন মিলে শিল্পী সমিতির স্বার্থে কতটুকু কী করেছেন এ নিয়ে সালতামামি চলছে চলচ্চিত্রের এই সমিতিকে ঘিরে। সেইসঙ্গে আগামী মেয়াদের জন্যও তাদের প্যানেল সাজানো নিয়ে ব্যস্ত আছেন নেত্রী নিপুণ আক্তার। এ ব্যাপারে নিপুণ বলেন, 'আমাদের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষের দিকে। জাতীয় নির্বাচনের কারণে এখন তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। জাতীয় নির্বাচনের পর ৮ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে এই তফসিল ঘোষণা করা হবে। আপাতত আমরা প্যানেল গোছানোর কাজ নিয়েই ব্যস্ত আছি।'

এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিনেত্রী নিপুণ দাবি করেন তাদের মেয়াদকালে মিশা-জায়েদ খানের মেয়াদকাল থেকে অনেক বেশি উন্নতি করেছে শিল্পী সমিতি। অন্যদিকে অবশ্য জায়েদ খান দাবি করছেন, 'তারা যে কাজ অসমাপ্ত হিসেবে রেখে এসেছেন সেই কাজগুলোরই তারা কিছু করছে আর বাকি কাজগুলোর কিছুই তারা করতে পারেননি। এ ছাড়া গত দু'বছরে তারা নতুন কোনো কাজই হাতে নিতে পারেননি। নিজেদের উদ্যোগে সিনেমা তৈরিসহ আরও কতকিছু করবেন বলে অঙ্গীকার করেছিলেন, তাও করতে পারেননি।'

তবে যায়যায়দিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার আরও দাবি করেন, 'আগে সিনেমার ফাউন্ডেশনটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সেটা আবার আমরা ঠিক করেছি। দুই বছরে এই ভিত্তি ঠিক করেছি বলেই বাংলা সিনেমা এখন এত ভালো লাগছে।'

নিপুণ বলেন, 'সিনেমাকে সচল রাখতে হলে আগে ফাউন্ডেশন ঠিক রাখতে হবে। এটা ঠিক থাকলে সিনেমার অবস্থাও ভালো হবে। এখন আমরা জোর দিচ্ছি হলের ওপর। আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরী কাজ হচ্ছে হলগুলোর সংস্কার করা। বর্তমানে সিঙ্গেল স্ক্রিনের যেসব হল আছে এগুলোর এত বাজে অবস্থা যে, কোনো দর্শকের পক্ষে গরমে সিনেমা দেখা সম্ভব নয়। কাজেই হল মালিকরা যাতে হলগুলোর সংস্কারে সরকার থেকে লোনটা গ্রহণ করে এজন্য আমরা তাদের বোঝাচ্ছি। পাশাপাশি নতুন যে সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে সেটার প্রচার-প্রচারণার পক্ষে কাজ করছি। আমাদের প্রচার-প্রচারণার জন্যও এখন হলগুলোতে দর্শক আগের চাইতে অনেক বেশি হচ্ছে। আমরা আমাদের সাইট থেকে সব সময় এ নিয়ে প্রচার-প্রচারণার কাজ করে যাচ্ছি।'

নিপুণ আক্তার তার দু'বছরের সাফল্যের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে আরও বলেন, 'দুই বছরের মধ্যে আমরা এফডিসিকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছি। ইনশাআলস্নাহ, ২০২৪ সালের ঈদে আপনারা দেখবেন বাংলাদেশে বিশাল একটা জোয়ার, কিছু একটা বয়ে যাচ্ছে। আমি নির্বাচন থেকে যা কিছু বলে আসছি তা করছি।'

তবে শিল্পীদের একাংশ মনে করেন, জায়েদ খান যখন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন তখন সব সময়ের জন্যই তার একটাই ধ্যান-জ্ঞান ছিল সাধারণ শিল্পীদের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা করা। এ জন্য তিনি এফডিসিকে তখন 'নিজের ঘরবাড়ি' বানিয়ে ফেলেছিলেন। করোনার সময়ে তিনি এমনস অমানুষিক পরিশ্রম করেছন যা একেবারেই অবিশ্বাস্য। শিল্পীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তিনি সেটা গোটা ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসেই বিরল। এ কারণে এখনও তিনি সাধারণ শিল্পীদের কাছে 'প্রিয়পাত্র' হয়ে আছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে