আজকের যায়যায়দিন

পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে আরও দুটি খাল খননের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এর জন্য প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই পদক্ষেপ জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় আরও বেশি জমিকে সেচের আওতায় আনতে সাহায্য করবে কিন্তু বিপর্যস্ত করতে পারে বাংলাদেশকে। উত্তরাঞ্চলে পানি সংকট নিরসনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন রাজ্যটির সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে প্রায় এক হাজার একর জমি সেচ দপ্তরকে হস্তান্তর করেছে। এই জমি তিস্তার বাম তীরে দুটি খাল তৈরি করতে প্রশাসনকে সহায়তা করবে। অন্যদিকে তিস্তা ছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত জলঢাকা নদীর পানিও সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য খালের দিকে সরানো হবে।

নতুন করে দুটি খাল খননের বিষয়ে শনিবার পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন খাল খননের জন্য আমাদের এক হাজার একর জায়গা হস্তান্তর করেছে। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে একটি জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেনি। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারে তহবিল না পেলেও, পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।

এদিকে, মমতার সরকারের এই খাল খননের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ রুষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় পর মমতার সরকারের খাল খননের সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়বে ঢাকা। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় বসার পর তার আপত্তির কারণেই নয়াদিলিস্ন ও ঢাকার মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে তৈরি সংকটের

অতীত ভুলে সামনে তাকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

সমাধান হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের একজন ফ্যাকাল্টি বলেছেন, তিস্তা থেকে আরও বেশি পানি নতুন খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হলে উষ্ণ মৌসুমে আরও কম পরিমাণে পানি যাবে বাংলাদেশে। মূলত, গ্রীষ্মের মাসগুলোতে তিস্তায় প্রায় একশ কিউমেক (সেকেন্ডে প্রতি কিউবিক মিটার) পানি পাওয়া যায়। যেখানে ভারত এবং বাংলাদেশে কৃষিজমিতে সেচের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৬০০ কিউমেক পানি।

সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প অনুসারে, তিস্তা এবং জলঢাকা থেকে পানি তোলার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করা হবে। অন্য খালটির দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার। যেটি তিস্তার বাম তীরে নির্মিত হবে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, খাল দুটি খনন হলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক লাখ কৃষক সেচের সুবিধা পাবে। তিস্তা ব্যারেজ জলপাইগুড়ি জেলার গাজলডোবায় অবস্থিত।

উত্তরবঙ্গের ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ কাজের সুবিধার জন্য ১৯৭৫ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, তিস্তা নদীর পানি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রবাহমান অন্য নদীর পানিও যাতে খালের মধ্যদিয়ে দুইপারে চাষ অঞ্চলে সেচের মাধ্যমে পাঠানো।

১৯৭৫ সালে উত্তরবঙ্গের ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ সুবিধার উদ্দেশ্য নিয়ে চালু করা হয়েছিল তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প। পরিকল্পনা ছিল তিস্তা নদীর দুই পারের কৃষিজমিতে খালের মাধ্যমে সেচের পানি সরবরাহ। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত অন্যান্য নদীর পানিও খালগুলোতে প্রবাহিত করা। যদিও প্রকল্পটি কয়েক দশক ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেবল ১ দশমিক ৪ লাখ হেক্টর জমিতে বর্তমানে পানি ব্যবহৃত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি বস্নকের আরেকটি খাল মেরামত করবে সেচ বিভাগ। এই খালটি চালু হয়ে গেলে বস্নকের ৩২ হাজার একর জমিতে সেচ সুবিধা পাবেন কৃষকরা।