সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

আগামী অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নিজেদের প্রস্তুতিতে দৃষ্টি রেখে আজ বুধবার থেকে মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপের ১৬তম আসর শুরু করতে যাচ্ছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। হাইব্রিড মডেলে এবারের আসরটি গড়াবে দুই দেশ শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মুলতানে নেপালের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এই প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে আয়োজক দুটি দেশ। টুর্নামেন্টের ৪টি ম্যাচ পাকিস্তানে এবং ৯টি অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলংকায়। গ্রম্নপ 'এ'তে খেলবে ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল।

গ্রম্নপ 'বি'তে খেলবে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকা। নিয়ম অনুযায়ী গ্রম্নপ চ্যাম্পিয়ন হোক কিংবা না হোক, সুপার ফোরে উঠতে পারলে পাকিস্তানের অবস্থান হবে এ-১, ভারতের এ-২। শ্রীলংকার ক্ষেত্রে বি-১ ও বি-২ হবে বাংলাদেশ। যদি নেপাল বা আফগানিস্তান সুপার ফোরের টিকিট কাটে, তারা বাদ পড়া দলের স্থানটি দখল করবে। এশিয়া কাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৭ সেপ্টেম্বর।

এশিয়া কাপের ম্যাচের আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পাকিস্তান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন উপমহাদেশের

অস্কারজয়ী বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও সুরকার এআর রহমান ও পাকিস্তানের খ্যাতিমান শিল্পী আতিফ আসলাম। এছাড়াও ট্রেডিশনাল এশিয়ান মিউজিক ও নৃত্য পরিবেশনা থাকবে। সর্বশেষ থাকবে আতশবাজির ঝলকানি ও ড্রোন শোর ব্যবস্থা।

উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠান ভারতের স্টার স্পোর্টস চ্যানেলে সরাসরি দেখা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশের টি-স্পোর্টসেও দেখা যাবে বিশেষ এই আয়োজন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, শ্রীলংকায় বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকবে এবং ম্যাচের দিনগুলোতে রয়েছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। যদিও বৃষ্টি খেলায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাবে না। পাকিস্তানের মুলতান ও লাহোরে বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় খেলাগুলো মাঠে গড়াবে। টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভি বাংলাদেশে এশিয়া কাপের সব ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার করবে।

মূলত এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাধ্য হয়ে যৌথভাবে ইভেন্টটি আয়োজনে করছে দুই দেশ।

টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সফল দল ভারত। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাতবার শিরোপা জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয় বার শিরোপার স্বাদ নেয় শ্রীলংকা। মাত্র দু'বার ট্রফি ঘরে তুলে পাকিস্তান। বেশ কিছুদিন যাবত ওয়ানডে ফরম্যাটে সেরা দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বাংলাদেশ তিনবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি।

১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের প্রত্যেক আসরেই অংশ নেয়া একমাত্র দল শ্রীলংকা। এশিয়া কাপে একবার করে অংশ নেয়নি ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ দল।

এ বছরের শেষ দিকে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ মাথায় রেখে এবারের এশিয়া কাপ ৫০ ওভারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে বিশ্বকাপের ফরম্যাট হিসেবে এশিয়া কাপ আয়োজনের সিদ্বান্ত নেয় আয়োজকরা। এজন্য ২০১৬ এবং ২০২২ সালে টি২০ বিশ্বকাপের বছরে এশিয়া কাপ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বিশ্বকাপের জন্য দলগুলোকে সেরা প্রস্তুতির মঞ্চ তৈরি করে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০১৮ সালে সর্বশেষ ওয়ানডে ফরম্যাটে হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে লিটন দাসের অসাধারণ সেঞ্চুরি সত্ত্বেও শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে হার এড়াতে পারেনি টাইগাররা।

সর্বশেষ ২০২২ সালে টি২০ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। তাই টি২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে এশিয়া কাপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে নেপাল। একমাত্র নেপাল ছাড়া বাকি পাঁচ দলই আগামী বিশ্বকাপে খেলবে। এজন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে ভুলত্রম্নটি শুধরে নিতে এবারের টুর্নামেন্টটি সব দলের জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শিরোপা জয়ের প্রশ্নে ফেভারিট হিসেবে কাগজে কলমে সবচেয়ে শক্তিশালী দল ভারত। অবশ্য দেরিতে হলেও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে অন্তত ওয়ানডে ফরম্যাটে যেকোনো দলের বিপক্ষে যেকোনো কন্ডিশনে জিততে পারে তারা।

বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে শ্রীলংকাকে বাছাইপর্ব খেলতে হয়েছে। তবে দলটির এশিয়া কাপের রেকর্ড অসাধারণ। এছাড়া এবারের টুর্নামেন্টে তারা নিজ মাঠে খেলবে। যে কারণে দলটির মোকাবিলা করা যে কোনো দলের জন্যই কঠিন হবে। যদিও ইনজুরি এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে মূল খেলোয়াড়দের অনেকেই লংকান দলের হয়ে এবার খেলতে পারছেন না।

এদিকে আবার ঐতিহাসিকভাবে এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে খুব একটা সফল দল বলা যাবে না। আবার 'আনপ্রেডিক্টেবল' হিসেবে পরিচিতি থাকায় তাদেরকে আলোচনার বাইরেও রাখা যাবে না। তাছাড়া বাবর আজমের অসাধারণ নেতৃত্ব গুণের কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ উজ্জীবিত হয়ে ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করে যাচ্ছে পাকিস্তান।

ওয়ানডে ফরম্যাটের ক্রিকেটে আফগানিস্তানের ধারাবাহিকতায় ঘাটতি আছে। তবে নিজেদের দিনে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর যোগ্যতা রয়েছে তাদের। আফগানদের ব্যাটিংয়ে গভীরতার ঘাটতি রয়েছে। তবে রশিদ খানের নেতৃত্বে বিশ্বমানের স্পিনারদের নিয়ে ওই ঘাটতি পূরণ করার দক্ষতা রয়েছে দলটির।

টুর্নামেন্টে অংশ নেয়াদের মধ্যে নেপাল এমন একটি দল যারা যে কোনো দলকে হারাতে পারলেই সন্তুষ্ট। তবে এটি নিশ্চিত নেপালের বিপক্ষে ম্যাচকে নিজেদের প্রস্তুতি ম্যাচের অংশ হিসেবেই নেবে উপমহাদেশের দুই ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তান।

তবে ২০১৮ সাল থেকে ওয়ানডে ম্যাচের পরিসংখ্যান অনুযায়ী টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ছয় দলের মধ্যে সবচেয়ে সফল হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। বিগত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে ভারতের জয়ের হার ৬১.৯০ শতাংশ। এই সময়ে মোট ৮৪টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ভারত জয় পেয়েছে ৫২টি ম্যাচে। অপরদিকে বাংলাদেশের জয়ের হার ৫৯.০৯ শতাংশ। ৬৬টি ম্যাচ খেলে ৩৯টিতে জয় পেয়েছে টাইগাররা।

৫৭টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৩০ ম্যাচে জয় পাওয়া পাকিস্তানের জয়ের হার ৫২.৬৩ শতাংশ। ৭১ ম্যাচে অংশ নিয়ে শ্রীলংকা জয় পেয়েছে ৩১টি ম্যাচে, জয়ের হার ৪৩.৬৬ শতাংশ। আফগানিস্তানের জয়ের হার ৪০.৯০ শতাংশ। তারা ৪৪টি ম্যাচ খেলে জিতেছে ১৮টিতে।

আসন্ন টুর্নামেন্টে কোনো একটি দলকে ফেভারিট বলতে রাজি নন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ফার্স্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম। তিনি বলেছেন, সবগুলো দলের জন্যই এই টুর্নামেন্টটি বেশ কঠিন হবে। সেই সঙ্গে তিনি এটিও বলেছেন, আসরে হাল্কাভাবে নেয়া যাবে না বাংলাদেশ ও শ্রীলংকাকেও। কারণ ট্রফি জয়ের মতো ক্ষমতা দুই দলেরই রয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে আকরাম সাংবাদিকদের বলেন, 'গতবার আমাদের ধারণা ছিল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলবে ভারত ও পাকিস্তান। তবে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয় করল শ্রীলংকা। তিনটি দলই বিপজ্জনক। যে কোনো দলই শিরোপা জয় করতে পারে।'

পাকিস্তানি কিংবদন্তি বলেন, 'টুর্নামেন্টের অন্য দলগুলোও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলছে। গত আসরে শ্রীলংকা ফাইনাল খেলেছে, আর ভারত ফাইনাল খেলতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা জানি ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দুই দলের ম্যাচ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা থাকে, থাকে বিপুল সংখ্যক মানুষের দৃষ্টি এবং বিরাট একটা ভক্তকুল এটিকে অনুসরণ করে। তবে অন্য দলগুলোও এখানে আসে খেলার জন্য। সুতরাং আপনি শ্রীলংকা বা বাংলাদেশকে অবহেলা করতে পারেন না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে