শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এখন আগুন সন্ত্রাস চলছে : তথ্যমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এখন আগুন সন্ত্রাস চলছে : তথ্যমন্ত্রী

আগুন সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা না গেলে দেশে শান্তি স্থাপন করা যাবে না মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০১৩-১৪ সালে খালেদা জিয়া আর এখন তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এই আগুন সন্ত্রাস চলছে। কেউ কেউ ওদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বিবৃতি দেয়। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা হয় না। তিনি বলেন, 'জনগণের রায়ে আমরা যদি সরকার গঠন করতে পারি, আগুন সন্ত্রাসীকেও নির্মূল করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।'

রোববার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক মানুষ পোড়ানোর প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে' মানববন্ধনের আয়োজন করে 'অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ' নামে একটি সংগঠন।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তথমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমি প্রশ্ন করেছি, পৃথিবীর কোথাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পেট্রোল বোমা, মানুষ হত্যা হচ্ছে কিনা। তারপর তিনি স্বীকার করেছেন, গত ২০ বছরে পৃথিবীর কোথাও এরকম কিছু ঘটেনি।'

অগ্নিসন্ত্রাসের মূলোৎপাটনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি যারা করে, তারা দেশ, জাতি ও সমাজের শত্রম্ন'। এদের অর্থদাতা, হুকুমদাতা, মদদদাতাদের ধরতে হবে। তাদের বিচার করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত নেতাদের অর্থে, হুকুমে, মদদে এ হত্যা চলছে। এদের বিচার না হলে এই আগুন সন্ত্রাস বন্ধ হবে না।'

মন্ত্রী বিএনপির কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এই মানুষের আর্তনাদ কি আপনাদের কানে পৌঁছায় না? আসলে কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না, কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমন বিএনপি-জামায়াতও কখনো ভালো হবে না। সুতরাং এদের নির্মূল করতে হবে।'

এ সময় সংহতি জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে। খালেদা জিয়া একই কাজ চালিয়ে গেছে, এখনো একই প্রক্রিয়া তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের রক্তে সন্ত্রাস মিশে আছে। তারা দেশকে আবারও পাকিস্তানি-তালেবানি রাষ্ট্র বানাতে চায়।'

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত প্রতিহিংসার রাজনীতি, অসাম্প্রদায়িক দেশকে লন্ডভন্ড করতে তারা হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে যাচ্ছে। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফলে অসংখ্য নারী-পুরুষের জীবন দুর্বিষহ হয়েছে। অনেকে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন। তাই আমরা আজকের (রোববার) এই মানববন্ধন থেকে এসব অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের দ্রম্নত বিচারের দাবি জানাই এবং এসব কর্মকান্ড যেন পুনরায় না হয় সে আহ্বান জানাই।

গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে নিহত আলমগীর হোসেন শিমুলের ছেলে বলেন, '২০১৩ সালে আমার বাবা যখন বাজারে যান তখন তার গাড়িতে বিএনপি-জামায়াত আমাদের গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে গাড়ি পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাবাও পুড়ে মারা যান। অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে; কিন্তু তাদের বিচার হয়নি। দীর্ঘ ১০ বছর আমরা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত। আর কোনো সন্তানকে তার বাবাকে হারাতে না হয় এই কামনা করি। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।'

পেট্রোল বোমায় আহত খোকন মিয়া বলেন, 'আমি ২০১৩ সালে আমার গুলিস্তানের দোকান বন্ধ করে কাজলা রোডের কাছে পৌঁছালে আমাদের গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারা হয়। আমি কোনোভাবে বেঁচে গেলেও দুই সপ্তাহ পরে হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফেরে। দীর্ঘ ৯ মাস আমাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন আমাদের কাছে, আমাদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এর বিচার পাইনি। আমরা চাই আর যেন কখনো কারও ওপর পেট্রোল বোমা মারা না হয়, কারও জীবন নষ্ট না করা হয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আখতারুজ্জামান নির্যাতিত, আহত ও নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, যে মানুষগুলো সেদিন আহত হয়েছিলেন তারা আজকের জীবন্ত লাশ। ২০১৩-১৪ সালে টানা হরতাল-অবরোধে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, জার্নালগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাপারে নেগেটিভ দিক তোলে ধরা হয়েছিল যার ফলে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছিল। সে সময়ের হরতাল-অবরোধে দেশের যে ক্ষতি হয়েছিল তা ভোলার নয়।

তিনি আরও বলেন, ২০১৩-১৪ সালের সেই হরতাল-অবরোধে ১০ হাজার গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিল, যার মধ্যে ৫ হাজার যাত্রীবাহী গাড়ি ছিল। বর্তমানের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এক দিনের অবরোধে প্রায় ৯শ' কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। এই অবরোধের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের দিকে ধাবিত করতে চাচ্ছে। এখন সেই অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি এবং যারা এর শিকার হয়েছিল তাদের পুনর্বাসন করাটাও অত্যন্ত জরুরি।

অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বাবুলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এবং ভুক্তভোগী খুজেদাতুল নাসরিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আহত ও নিহত পরিবারের পক্ষে- আনোয়ার হোসেন আনুর স্ত্রী পারভীন বেগম, মাশরুহা বেগম, নিহত নাহিদ মোড়লের মা রুনী বেগম, আহত সালাউদ্দিন ভূঁইয়াসহ আরও অনেকে বক্তব্য প্রদান করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে