ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণের যেসব ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, তা নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয়- এমনটি দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ফেসবুকে শিক্ষকদের আগের বিভিন্ন সময়ের প্রশিক্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের শিক্ষাক্রমের অংশ নয়, আমাদের ক্লাসেরও অংশ নয়।

রোববার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস উন্নয়নে দেশের ১৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ লাখ নির্বাচিত বই (পাঠ্যপুস্তক ছাড়া) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদসহ অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।

দীপু মনি বলেন, অতীতে আমাদের শিক্ষকদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণের ফাঁকে বিনোদনের জন্য তাদের অংশগ্রহণে এসব ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো এখন ছড়িয়ে দিয়ে বিশেষ গোষ্ঠী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে অপপ্রচার চালাতে নতুন করে এসব ভিডিও তৈরিও করছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আমাদের অভিভাবকরা দীর্ঘদিন থেকে অভ্যস্তত্ম বাচ্চা কত নম্বর পেল; জিপিএ-৫ পেল কিনা; প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হলো কিনা; অন্যের বাচ্চার চেয়ে আমার বাচ্চা বেশি নম্বর পেল কিনা- এই বিষয়গুলো নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। সে জায়গা থেকে বেরিয়ে প্রত্যেকটি কাজে সহযোগিতার জায়গায় তারা কাজ করছেন। এই বিষয়গুলোর জন্য বাবা-মায়ের কিছু সংশয় তো কাজ করছেই। সেগুলোকে এই গোষ্ঠী (মিথ্যাচারকারী) কাজে লাগাচ্ছে।'

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'সবচেয়ে খারাপ যেটা, একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করছে। এমনকি ধর্মীয় বিষয় নিয়েও মিথ্যাচার করছে,

সেগুলো জঘন্য মিথ্যাচার। তার পাশাপাশি অতি সম্প্রতি দেখছি- যেগুলো আমাদের প্রশিক্ষণের অংশ নয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ নয়, ক্লাসের অংশ নয়, নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয়, তেমন নানান রকমের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। অতীতের কোনো প্রশিক্ষণের ব্রেক থাকে, প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজেরা নিজেরা বিনোদনের জন্য সেই রকম; যা মাধ্যমিকেরও নয় সেই রকম অতীতের অন্যান্য প্রশিক্ষণের বিনোদনের অংশ সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে এগুলো প্রশিক্ষণ। এমনকি নতুন ভিডিও তৈরি করেও ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।'

অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'একটু দেখুন, আপনার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার বাচ্চা যদি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে থাকে তাহলে তার আচার-আচরণ পরিবর্তন হয়েছে। সে কত নম্বর পেয়েছে সেদিকে নজর না দিয়ে সে শিখল কিনা, সেদিকে নজর দিন। একটু ধৈর্য ধরুন।'

নতুন শিক্ষাক্রমে দেশের ৮ শতাধিক বিশেষজ্ঞ জড়িত ছিলেন উলেস্নখ করে ডা. দীপু মনি আরও বলেন, 'সবাইকে কোনো না কোনোভাবে এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে রেখে জনগণের মতামত, পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিছু পরামর্শসহ তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পাইলটিং করেছি। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে। সব বইকে আমরা বলছি পরীক্ষামূলক সংস্করণ, আমরা মনে করিনি আর পরিশীলন, পরিমার্জন দরকার নেই, একবারে চূড়ান্ত। আমরা মনে করি এই বইগুলো আরও পরিশীলন, পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে। সে জন্য সবার পরামর্শ গ্রহণ করছি।'