বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রে আগুন ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রে আগুন ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় একশ স্থানে সহিংসতা হয়েছে। নিহত হয়েছেন অন্তত তিনজন। যা গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এবার শেষ সময়ে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন কেন্দ্র ও নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ এবং হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী- রাজশাহীতে ৪টি ও ফেনীর সোনাগাজীতে একটি কেন্দ্র এবং নওগাঁয় ৬ ও বরগুনায় ৩ ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় ২টি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খুলনায় একটি ক্যাম্পের পাহারাদারের শরীরের দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

আমাদের রাজশাহী অফিস জানায়, জেলার তিনটি উপজেলার চারটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দৃর্র্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে পেট্রোল ঢেলে এসব ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে বই ও কাগপত্রসহ স্কুলের আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এ ছাড়া একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে থেকে দুটি হাতবোমা পাওয়া গেছে।

ভোট কেন্দ্রগুলো হলো- রাজশাহী-৩ আসনের মোহনপুর উপজেলার মতিহার উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র, রাজশাহী-৪ আসনের বাগমারা উপজেলার আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র এবং রাজশাহী-৬ আসনের বাঘা উপজেলার ঝিনা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোতনশী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, চারটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে বই ও কাগপত্রসহ স্কুলের বেশকিছু আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, বাগমারার আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে দুটি হাতবোমা পাওয়া গেছে।

বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তরা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের অফিসকক্ষে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে। জানালা দিয়ে ভেতরে আগুন ধরে যায়। এতে সেখানে থাকা বইপত্র পুড়ে যায়। এ সময় বিকট শব্দ শুনে লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বিদ্যালয়ের ফটকে দুটি হাতবোমা জাতীয় বস্তু ফেলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন জাতীয় জরুরি সেবার নম্বরে (৯৯৯) ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশ সেখান থেকে দুর্বৃত্তের ফেলে যাওয়া একটি মানিব্যাগ উদ্ধার করে।

খুলনা অফিস জানান, খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এসএম কামাল হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্পের পাহারার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তির গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে খানজাহান আলী থানার যোগীপোল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত হাসান ফারাজী যোগীপোল এলাকার সোহরাব ফারাজীর ছেলে। আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ঘাড়ের দুই পাশে চুল ও কিছু অংশ পুড়ে গেছে।

খবর পেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার সকালে আহত কর্মীকে দেখতে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম কামাল হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।

যোগীপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, 'যোগীপোল এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন হাসান ফারাজী। শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে দুই-তিন দুর্বৃত্ত তার গায়ে কেরোসিন ছুড়ে মারে। এরপর তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে হাসান ফারাজীর ঘাড়ের দুই পাশে চুল ও কিছু অংশ পুড়ে যায়। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখন আশঙ্কামুক্ত।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মমতাজুল হক বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে অভিযোগ দায়ের হবে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

আমাদের ফেনী প্রতিনিধি জানান, জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের চর সাহাভিকারী উচ্চবিদ্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। আগুনে বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার শিক্ষক মিলনায়তনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। চর সাহাভিকারী উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি ভবনকে আগামী রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

চর সাহাভিকারী উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুর রহমানের বাড়ি বিদ্যালয় ভবনের পাশেই। তিনি বলেন, সকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানে যাওয়ার সময় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। পরে তিনি কাছে গিয়ে জানালা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে আগুন জ্বলতে দেখে চিৎকার করে লোকজন ডাকেন। এ সময় তিনি দ্রম্নত ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। খবর পেয়ে সকালে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুদ্বীপ রায় বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ৯৯৯-এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

তবে যে ভবনে আগুন লাগানো হয়েছে, সেটি ভোটকেন্দ্র নয় বলে জানান উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টির আঙিনায় চারটি ভবন রয়েছে। যে ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে, ভোট হবে তার পাশের দুটি ভবনে। তবে যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে, তাই ভোটের সময় কেন্দ্রটিতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। বিদ্যালয়ে আগুনের ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে কয়েকটি বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের পিয়ন আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আগুনে শিক্ষক মিলনায়তনের ২টি কম্পিউটার, কাগজপত্রসহ ৭টি আলমারি, ২০টি চেয়ার, ২টি টেবিল ও বই পুড়ে গেছে। তবে জানালা দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। কারণ, বৃহস্পতিবার তিনি জানালা বন্ধ করে গিয়েছিলেন বলে জানান।

উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. জামিল আহমেদ খান বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনের জানালার পাশে একটি অকটেনের বোতল পাওয়া গেছে। তবে আগুন কী দিয়ে ধরানো হয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকের ছয়টি নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার ভোরে নওগাঁ পৌরসভার আনন্দনগর ও চকপ্রসাদ হিন্দুপাড়া, চন্ডিপুর ইউনিয়নের মোলস্নাপাড়া ও সাখিদারপাড়া এবং শৈলগাছী ইউনিয়নের শিংবাচা ও চকচাঁপাই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নওগাঁ সদর আসনের নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ ইমরান বলেন, ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছেকার আহমেদ শিষানের কর্মী-সমর্থকরা প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নৌকার বিভিন্ন নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়ে আসছে। প্রচার-প্রচারণার শেষ মুহূর্তেও তারা ৬টি ক্যাম্পে আগুন দিল। নৌকার জনসমর্থন বেশি হওয়ায় নিশ্চিত পরাজয় জেনে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তারা এসব করে যাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষান বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নিজেরাই নিজেদের ক্যাম্পে আগুন দিয়ে নৌকার সমর্থকরা মিথ্যা নাটক করছে। উল্টো তারাই আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে।

নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর-আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনা-১ আসনের (বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভোরে সদর উপজেলার ৪নং কেওরাবুনিয়া ইউনিয়নের আমড়াঝুড়ী এলাকায় একটি এবং ৩নং ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের রোডপাড়া ও বুর্জিরহাট খোলা নামক এলাকায় দুটি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের এ ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট এম মুজিবুর রহমান কিসলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো গত রাতে আমরা প্রচার ক্যাম্পে তালা দিয়ে বাড়ি চলে যাই। পরে সকালে খবর পাই আমাদের কয়েকটি প্রচার ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়েছে। পরে ক্যাম্পে এসে দেখি ক্যাম্প খোলা এবং ভেতরে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হালিম বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে মনে হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও এর পেছনে নাশকতামূলক কোনো পরিকল্পনা ছিল। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে বানচাল করার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না সেটা আমরা তদন্ত করে দেখব।

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের পটিয়ায় নৌকার দুই অফিসে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর সমর্থকরা আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে পটিয়া-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার গৈড়লার টেক এলাকায় নৌকার প্রচারণা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাতে পথরুদ্ধ করে ধারাল কিরিচ দিয়ে কুপিয়েছে নৌকার সমর্থক এসএম ফকরুল আলম সজীবকে (৪০)। সে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ সময় তার মোটর সাইকেলে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সজীবকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, এবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন সামশুল হক চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর একের পর এক নৌকা সমর্থকদের ওপর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা শেষ করে পটিয়া থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে জঙ্গল খাইন এলাকার বাড়ি ফিরছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সজীব। মোটর সাইকেল যোগে সে গৈড়লার টেক এলাকায় পৌঁছলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার পথরুদ্ধ করে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে তাকে রক্তাক্ত করে এবং মোটর সাইকেল পুড়ে দেন। সে জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরোল গ্রামের বাসিন্দা। একই রাতে উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে ভান্ডারগাঁও ও ছনহরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আলমদার পাড়া এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন পুড়ে দিয়েছে নৌকা প্রার্থীর দুটি অফিস। এ সময় হামলা চালিয়ে তারা ঈগলের স্স্নোগান দিতে দিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম শহরের বাসায় ফিরে যাওয়ার পর জানতে পারি স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন রাতে নৌকা প্রার্থীর অফিসে আগুন দিয়ে পুড়ে দিয়েছে। রাতে ৯৯৯ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হলে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পদিরর্শন করে।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের পরাজয়ের বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে এবার বিভিন্ন ধরনের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দিন বলন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর দুটি অফিসে আগুন ও প্রার্থীর সমর্থকের গাড়িতে আগুন দিয়ে হামলার ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর সত্যতা পেলে অবশ্যই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আলোচিত সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার শিমলাবাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত আটটার দিকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিমলাবাজার এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের সমর্থকরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি শিমলাবাজারসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যান্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে এলে মুরাদ হাসানের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট সাখাওয়াত আলমের নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকরা বাধা দেন। এ সময় দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ইটপাটকেল ও লাঠিসোটার আঘাতে দুপক্ষের ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা-পুলিশ ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) একটি টহল দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, মারামারির ঘটনায় ১০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারোর অবস্থাই গুরুতর নয়।

এ ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুবুর রহমানের পক্ষে রাতেই সরিষাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মুরাদ হাসানের সমর্থকরা আমার নৌকা প্রতীকের মিছিলের সামনে বাধা দেয়। এ সময় কয়েকজন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়।'

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী মুরাদ হাসানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে থানায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে মামলা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে