বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

'সর্বজনীন ভোট বর্জনের' ডাক বিএনপির

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান -ফোকাস বাংলা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সব হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে জনগণকে 'সর্বজনীন ভোট বর্জনে'র ডাক দিয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে যারা জনগণকে ভোট কেন্দ্রে যেতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, তাদের ভবিষ্যতে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।

শুক্রবার সকালে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, 'এই একদলীয় বাকশালি সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই তাদের অন্যায় ও অবৈধ হুমকিকে পরোয়া করার আর কোনো কারণ নেই। সর্বজনীন ভোট বর্জনের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহণ একদলীয় শাসনের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষ শিগগিরই মুক্তি পাবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।'

গুলশানে মঈন খানের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।

মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি এই আহ্বান থাকবে, আপনারা জনপ্রিতিনিধিত্ববিহীন বর্তমান সরকারের কোনো হুমকি-ধমকি অথবা তাদের কোনো ভয়ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। সাহসিকতার সঙ্গে সেই সরকারের প্রদত্ত ভয়ভীতির মোকাবিলা করুন, যে বা যারা আপনাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করতে চায় তাদের চিহ্নিত করুন। ভাতা কার্ড জব্দ করে কিংবা ভাতা বন্ধ করে দিয়ে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্যকরণ কোনো অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত হবেন বা হচ্ছেন, ভবিষ্যতে তাদের আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট কারচুপি করতে সরকার ও সরকারির দলের বিভিন্ন নীল-নকশার পরিকল্পানা যেমন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা লাগামহীন জাল ভোট প্রদানের পরিকল্পনা, ভোটার সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো, মৃত ও প্রবাসী ব্যক্তির নামে ভুয়া ভোট প্রদান প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরেন মঈন খান।

তিনি বলেন, 'আজ থেকে অল্প কয়েক মাস আগে এক উপনির্বাচনে ৫৩ সেকেন্ডে ৪৭টি ভুয়া ভোটের সিল মারা হয়েছিল। এটা গ্রিনিচ বুকের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সেই ধারা ৭ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনে তারা আরেকটি কলঙ্কিত অনিয়ম ঘটাতে যাচ্ছে।'

মঈন খান বলেন, বিএনপির একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দল। বিএনপিকে নিয়ে অনেক গল্প সরকার সাজিয়েছে, অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। অতীতে হয়তো এমন একটি বিশ্ব পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল, আফগানিস্তানের একটি চিত্র ছিল তখন হয়তো সরকারের এসব গালগল্প অনেককে মিথ্যাভাবে প্রভাবিত করেছে কিন্তু আজকের পৃথিবী আলাদা। আজকে সরকার নতুন করে যদি সেই ২০১৪ এর ফর্মুলা অ্যাপস্নাই করে এই শান্তিপূর্ণ উদারনৈতিক দলের কোনো মিথ্যা ভাবমূর্তি দেশে বা বিদেশে প্রচার করতে চায় বা চাইছে, সেটা কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়ে গেছে। বিশ্বের মিডিয়া ও বিশ্বের গণতন্ত্রীকামী মানুষ তারা বাংলাদেশের আজকে তারা কোন চিত্রে দেখেছে সেটা কিন্তু তারা ইতোমধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছে। এখানে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই। ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাকডাউনের কথা তারাই বলেছে, আজকে নতুন করে তারা যে কথাগুলো বলছে, একজন মানুষের ইচ্ছায় আজকে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের ইচ্ছা নির্ধারিত হবে। এটা কোনোদিন হতে পারে না।

তিনি বলেন, ইনশালস্নাহ এই দেশের এই অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী সরকারকে একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় হটিয়ে দিয়ে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার আবার প্রতিষ্ঠা করব। সরকার ভাবছে ৭ জানুয়ারি তাদের জয়লাভের দিন। আসলে ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের পরাজয়ের দিন। কারণ সেদিন তারা বাংলাদেশের নতুন করে অপমৃতু্য ঘটাবে।

ভোট মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনই হয়ে গেছে মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, ভোট তো যেদিন মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৩০ নভেম্বর সেদিনই হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে যে কোনো লোককে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে দেবে কোন আসনে কে আসবে। কিসের ৭ তারিখ ভোট? ৭ তারিখে একটা ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচন তো হয়েই গেছে। এটা ইলেকশন না এটা সিলেকশন।

সরকার নাশকতা সৃষ্টি করে দায় অন্যের ওপর চাপাচ্ছে উলেস্নখ করে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দোলনকে বিপথগামী করার জন্য সরকার নিজেই বেশকিছু ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় বিএনপির ওপর চাপানো চেষ্টা করেছে। এখনো সেই অপচেষ্টা চলছে।

আওয়ামী লীগ দেশ নিয়ে খেলা করছে অভিযোগ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওবায়দুল কাদের খেলার কথা বলে। বিএনপি রাজনীতিকে খেলা বলেই মনে করে না। বিএনপি মনে করে রাজনীতি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এটা খেলার বিষয় না। যারা নির্বাচনটাকে খেলা মনে করে তারা এটাকে নিয়ে খেলা করছে। তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা করছে, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খেলাধুলা করছে। দেশটার সর্বনাশ করে দিচ্ছে।

মুক্তকামী জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। ইনশালস্নাহ যেমন দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছি তেমনি এদেশে পুনরায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে