মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে তাদের ছাড় নেই: প্রধানমন্ত্রী

এস এম নজরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা

নির্বাচনের আগে যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ঘটনায় যারা হুকুম দিয়েছে, খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, 'এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, সবার হাতে মোবাইল ফোন, সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে। যারা এই কাজগুলো (জ্বালাও-পোড়াও) করছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা জ্বালাও-পোড়াওয়ের জন্য হুকুম দিয়েছে, তাদেরও আমরা গ্রেপ্তার করছি। আর যেন কেউ এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে না পারে, এটাই আমরা চাই।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, '৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচন হলো। ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হন। ভোট চুরির অপরাধে নাকে খত দিয়ে খালেদা জিয়ার বিদায় নিতে হয়। তারা এখন আন্দোলন করে গণতন্ত্রের জন্য। যারা গণতন্ত্রের "গ" ও বোঝে না। তারা গণতন্ত্র বানানও করতে পারবে না।' তাদের আন্দোলন হলো মানুষ পুড়িয়ে মারা। তারা জানে জ্বালাও পোড়াও। জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা। বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন, রেলে আগুন, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে যা করেছে এখন আবার তা শুরু করেছে। এই নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলন করতে গিয়ে ট্রেনে আগুন দিয়ে মা সন্তানকে পুড়িয়ে মেরেছে। এই দৃশ্য কোনো মানুষ সহ্য করতে পারে না। যে কারণে তারা যতই চিৎকার করুক তাদের কথায় জনগণ সাড়া দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যতবার নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ কোনোবারই তাতে সাড়া দেয়নি। মানুষ কিন্তু তার ভোটটা চুরি করলে সে ঠিকই ধরে নেয়। দৃষ্টান্ত হচ্ছে '৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারির নির্বাচন। খালেদা জিয়া নির্বাচন করেছিল ক্ষমতায় থেকে ১৫ ফেব্রম্নয়ারিতে '৯৬ সালে। সেখানে কিন্তু সারা দেশে সমস্ত প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী সবাইকে নামিয়ে দিয়ে তার নির্বাচন করে, কিন্তু সেখানে কোনো ভোটার যায়নি। তারপরেও সিল মেরে বাক্স ভরে ভোট নেওয়ার পরেও মাত্র ২১ পারসেন্ট ভোট হয়েছিল। জনগণ কিন্তু মেনে নেয়নি তার ভোট চুরি। যে কারণে সে সময়ে আন্দোলন হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনারা জানেন ষড়যন্ত্র চক্রান্ত কখনো শেষ হয় না। এই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।' কোটালীপাড়াবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমার শক্ত একটা ঘাঁটি আছে বলেই আমি যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারি। সেই শক্তি আপনারা দিয়েছেন। টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার মানুষ আমার বড় শক্তি, বাংলাদেশের মানুষ আমার বড় শক্তি। আগামীতেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।'

তিনি বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনাভাইরাসে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আবার হামলা শুরু হয়েছে। এজন্য সামনে আরও দুর্দিন আসতে পারে। আমাদের দেশের মাঠি উর্বর। আমাদের মানুষ আছে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সঙ্গে সঙ্গে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করতে হবে। আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের কোনো উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে যখন আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে। '৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করি। স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করি। এরপর ২০০১ এ আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। সেটাও একটা চক্রান্ত ছিল। তখন বিএনপির দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, মানিলন্ডারিং, গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলার কারণে জনগণ তাদের ওপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের দুঃশাসনের কারণে ইমারজেন্সি আসে। ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকায় দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'সব ষড়যন্ত্র ভেদ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সবাই আমরা এক সঙ্গে কাজ করে এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইনশাআলস্নাহ। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের জয় হয়েছে। এ জয় গণতন্ত্রের জয়, এ জয় বাংলাদেশের জনগণের জয়। কাজেই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।'

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি ও সাবেক সিনিয়র সচিব শহীদ উলস্না খন্দকার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানা, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাব উদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান হাওলাদার, এইচ এম ওহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন সেখ, মতিয়ার রহমান হাজরা, কামরুল ইসলাম বাদল, জাহাঙ্গীর আলম খানসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারা চেয়ারম্যানসহ তিন সহস্রাধিক নেতাকর্মী।

পরে কোটালীপাড়াবাসীর পক্ষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদ উলস্না খন্দকার প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে