সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঢাকায় বিএনপির কালো পতাকা মিছিল পন্ড

আটক করেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মঈন খানকে
যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কালো পতাকা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে উত্তরা এলাকা থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে আটক করে পুলিশ। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় -সংগ্রহ

পুলিশের বাধা, গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সারাদেশের জেলা ও মহানগরের অন্তর্গত থানা-উপজেলা ও পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিল করেছে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন মঙ্গলবার এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বাতিল, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করে দলটি। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সাতটি স্থানের কোনোটিতেই কর্মসূচি পালন করতে পারেননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। কালো পতাকা নিয়ে নেতাকর্মীরা ওইসব স্থানে জড়ো হলেও অনুমতি না থাকায় তা পন্ড হয়ে যায়। কেবল দুটি স্থানে দুই থেকে তিন মিনিটের ঝটিকা মিছিল করতে পেরেছেন।

মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় উত্তরা ১২ নাম্বার সেক্টর কবরস্থানের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিল বের করার চেষ্টাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে মঈন খান, সুলতানা আহমেদসহ আরো বেশ কয়েকজনকে আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ঘণ্টাখানেক পরে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আটকের আগে উপস্থিত সংবামাধ্যমকে মঈন খান বলেন, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল একটি কারণে। সেটা হলো, আমরা একটা দেশ চাই, যে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন থাকবে। কিন্তু আজ কিছুই নাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি।' বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন

\হকরে যাব। রাজপথে থাকব।'

পুলিশের উত্তরা পশ্চিমের এডিসি সালাহউদ্দিন বলেন, তারা (বিএনপি) সমাবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এটা ছিল অনুমোদনহীন। তারা দরখাস্ত করেছিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে এটা অনুমোদন করা হয়নি। যে কারণে আমরা মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি।

জানা গেছে, বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জোনভিত্তিক সাতটি স্থান থেকে কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করা হয়। এজন্য গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করে চিঠিও দেয় দলটি। দুপুর দুইটা থেকে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচি সফল করতে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

এর মধ্যে মহানগর উত্তরের মিরপুর ৬নং বাসস্ট্যান্ডের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে মিছিল বের করার চেষ্টা করা হলে সেখান থেকে মহানগর উত্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে নেতাকর্মীরা কিছুটা সরে গিয়ে কালো পতাকাসহ ঝটিকা মিছিল করেন।

বাড্ডা সুবাস্ত টাওয়ারে সামনে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান ও স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব এ জি এম শামসুল হকের নেতৃত্বে মিছিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এখানে দায়িত্বশীল মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম আহসান মাসুম বলেন, দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা বাড্ডা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। দুপুর পৌনে দুইটায় তারা ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাড়ানোর চেষ্টাকালে পুলিশের বাধা দেয়। এসময়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয়। এসময়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। পরে নেতাকর্মীরা সেখান থেকে সরে গিয়ে মোহাম্মদ শাজাহানকে নিয়ে গুলশান ক্লিনিক থেকে আমেরিকা দূতাবাস পর্যন্ত তারা কালো পতাকা মিছিল করেন।

দুপুর দুইটার দিকে মতিঝিল এলাকার পীরজঙ্গি মাজারের সামনে থেকে নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিলের জন্য বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিলেও পুলিশের কড়া অবস্থানের কারনে তা করতে পারেননি। পরে সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এখানে সার্বিক পরিস্থিতিতে তারা কর্মসূচি পালন করতে গেলে অযথা নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হতে পারেন, আহত হতে পারেন। সেজন্য তারা কর্মসূচি পালন করছেন না। মিটিং ও মিছিল করা সাংবিধানিক অধিকার। এ কর্মসূচির জন্য যথাসময়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। এরপরেও বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব করে তাদের আন্দোলন দমানো যাবে না। তাদের চলমান একদফার আন্দোলন চলমান থাকবে।

মতিঝিল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, 'কালো পতাকা মিছিলের কোন অনুমতি নাই। সেই কারণে এখানে আমরা তাদেরকে নিষেধ করেছি।'

এদিকে সূত্রাপুরে আড়াই মিনিটের ঝটিকা মিছিল করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ওই কর্মসূচিতে বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, ইশরাক হোসেনসহ মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আজিমপুর এলাকায়ও জড়ো হয়ে স্স্নোগান দিতে গেলে পুলিশের বাধায় ওই কর্মসূচি পন্ড হয়ে গেছে। আর কদমতলী এলাকায় পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাঁড়াতে দেয়নি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাইদুর রহমান বলেন, কদমতলীতে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে গেলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। পীরজঙ্গি মাজার এলাকাতে দাঁড়াতে দেয়নি। পীরজঙ্গি এলাকায় কর্মসূচি করতে না পেরে বিজয়নগর এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে পাঁচজন আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া আজিমপুর থেকে ১৫ জন ও দয়াগঞ্জ এলাকায় মিছিল শেষে ফেরার পথে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

\হকর্মসূচি পালনে বাধার অভিযোগ করে সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলে হামলা ও নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবৈধ সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর ওপর পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে। সারাদেশে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও পুলিশি হামলায় আহত হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী।

\হনেতাকর্মীরা জানান, দুপুর দুইটায় উত্তরা ১২ নাম্বার সেক্টর কবরস্থানের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিল বের করার চেষ্টাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে মঈন খান, সুলতানা আহমেদসহ আরও বেশ কয়েকজনকে আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘণ্টাখানেক পরে মঈন খানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সমমনাদের মিছিল : ?'দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও অবৈধ সংসদ বাতিলসহ এক দফা দাবি' আদায়ে কালো পতাকা মিছিল করে ১২ দলীয় জোট। বিজয়নগর থেকে শুরু হয়ে পল্টন আল-রাজী কমপেস্নক্সের সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি। এরপর সেখানে বক্তব্য রাখেন নেতারা।

মিছিলে অংশ নেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়াতে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফি উদ্দিন ভূঁইয়া, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।

এদিকে দুপুরের পর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে থেকে গণঅধিকার পরিষদের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময়ে পুলিশের লাঠি চার্জে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামানসহ ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে একই স্থানে গণফোরাম নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিল বের করার চেষ্টাকালেও পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ করেন দলটির নেতারা। দুপুরে বিজয়নগর, পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত কালো পতাকা মিছিল করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।

দুপুরে পুরানা পল্টন কলেজ গেইটে ডামি নির্বাচনের তামাশার সংসদ ভেঙ্গে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবিতে বাংলাদেশ লেবার পার্টি কালোপতাকা সমাবেশ ও মিছিল বের করে। মিছিলটি পুরানা পল্টন সড়ক হতে শুরু হয়ে বিজয়নগর, পল্টন মোড়, হাউজবিল্ডিং, সচিবালয়, প্রেস ক্লাব হয়ে তোপখানা রোডে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। বিকালে বিজয়-৭১ চত্বরে 'সংসদের প্রথম অধিবেশন প্রত্যাখ্যান' করে লালকার্ড দর্শন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে একই দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কালো পতাকা মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সকালে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে