সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
অগ্নিঝরা মার্চ

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বৈঠক ব্যর্থ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

স্বাধীনতার দাবিতে পূর্ব বাংলার বিক্ষুব্ধ জনতার সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও গগনবিদারী স্স্নোগানে একাত্তরের ২২ মার্চ ঢাকার আকাশ-বাতাস মুখর ছিল। এই দিন সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া-ভুট্টো সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক করেন। এটি ছিল ষষ্ঠ বৈঠক। তবে রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে কোনো ধরনের সমঝোতা হয়নি।

এই দিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, 'পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতাদের মধ্যে আলোচনা ক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্র্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।'

অন্যদিকে বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের আন্দোলন চলছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।'

জনতার অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম এই দিনে 'জয়বাংলা' স্স্নোগানে মুখর হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তব্য দেন। সংগ্রামী জনতার গগনবিদারী 'জয়বাংলা' 'জয় বঙ্গবন্ধু' ধ্বনি ও

করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন, বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, '২৩ বছর মার খেয়েছি, আর মার খেতে রাজি নই। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। কিন্তু এবার সুদে-আসলে বাংলার দাবি আদায় করে আনব। সাত কোটি বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন আমি অবশ্যই দাবি আদায় করে ছাড়ব।'

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী তার '৭১ এর দশ মাস' বইয়ে উলেস্নখ করেছেন-এই দিন সকালে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক পাহারায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। ভুট্টো ফেরার সময় হোটেলের বাইরে ভুট্টো-বিরোধী স্স্নোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ জনতা। ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।'

বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে এই দিন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকেরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে তারা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারেন না। তাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ। তারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে প্রস্তুত। এখানে শিশু-কিশোরদের আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শিশু-কিশোররা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে।

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী আরও লিখেছেন- ঢাকার কয়েকটি পত্রিকায় এই দিন 'বাংলার স্বাধিকার' শিরোনামে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয় বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত একটি বাণী। ওই ক্রোড়পত্রে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রবন্ধ লেখেন। অবজারভার গ্রম্নপের পত্রিকাগুলো সেদিন এই ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেনি। তারা পরদিন ছাপে। এই ক্রোড়পত্রের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন নাট্য আন্দোলনের কর্মী রামেন্দু মজুমদার।

রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৩ মার্চ 'পাকিস্তান দিবস' উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বলেন, 'নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মিলে-মিশে একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি তাহলে কোনো কিছুই আমরা হারাব না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে