মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন ২০২৪

আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে চাপ বাড়ছে বিএনপিতে

হাসান মোলস্না
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে চাপ বাড়ছে বিএনপিতে

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির প্রস্তুতি এরই মধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে। সঙ্গত কারণে ভোটবর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপির অনেক নেতার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ক্ষমতাসীন দলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। তাদের কাছে তথ্য আছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এবং ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনায় পড়ে আওয়ামী লীগ। তাই স্থানীয় সরকারের আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্য নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে। ফলে আওয়ামী লীগের যে কেউ চাইলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। এর মাধ্যমে দলের নেতাদের অধিক হারে প্রার্থী হওয়ার জন্য উৎসাহও দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে, এবারের উপজেলা নির্বাচন সবার গ্রহযোগ্য করার বিষয়ে আন্তরিক আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সবার গ্রহণযোগ করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে দলটি বার্তাও দিয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির মাধ্যমে মন্ত্রী, এমপি ও দলের নেতাদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ না করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পর বিএনপির নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ বহুগুণে বেড়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রভাবশালী একাধিক সূত্রমতে, আগামী ৮ মে থেকে চার ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো মুলতবি রাখে এবং সভার পরবর্তী তারিখ ১ এপ্রিল নির্ধারণ করে। কিন্তু সেদিনও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫২টি উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ এপ্রিল হওয়ায় বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীদের এক ধরনের তাড়া আছে। তৃণমূল এবং আগ্রহী কিছু নেতার কাছ থেকে নির্বাচনে যোগদানের জন্য চাপের সম্মুখীন হচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। অন্যদিকে দলটির সিনিয়র নেতারা নির্বাচনে যোগদান বা বর্জন করার বিষয়ে মতামতে বিভক্ত।

নির্বাচন বর্জনের বিপক্ষে থাকা বিএনপি সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপাকালে তারা বলেন, দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। দল কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে দূরে থাকতে পারে। এতে দলীয় প্রতীক ছাড়াই দলীয় লোকজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবে। ফলে প্রকাশ্য বিদ্রোহ এড়ানো সম্ভব হবে।

তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় দলীয় সমর্থক ও ভোটাররা বঞ্চিত হওয়ায় প্রায় সব পর্যাযে বিএনপি নিজেদের প্রতিনিধিত্ব হারিয়েছে। আর এ সময় দলের কোনো বড় কর্মসূচি না থাকায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তৃণমূলে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।

আর একেবারে নির্বাচন বর্জনের কট্টর অবস্থানের পক্ষে থাকা নেতাদের মত হচ্ছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা দলটির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে। দলীয় নেতাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর তা উপেক্ষা করার কৌশল ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। কারণ দলের উপজেলা শাখার সভাপতি বা সম্পাদক প্রার্থী হলে দলীয় পরিচয় গোপন করা কঠিন হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দল যে সিদ্ধান্ত যেমনই হোক, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আভাস দিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় ঈদ ও নববর্ষের অযুহাতে প্রচারণা শুরু করেছেন বিএনপির অনেক নেতা। উপজেলাবাসীকে ব্যানার পোস্টারের মাধ্যমে জানাচ্ছেন ঈদের শুভেচ্ছা।

উপজেলা নির্বাচনে দলের অবস্থান প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছি। আন্দোলনের কর্মসূচি চলমান। এ অবস্থায় সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তাভাবনাও নেই।'

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অধিকাংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। পরে উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারের 'নগ্ন হস্তক্ষেপের' অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এরপর থেকে সব ধরনের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। এর মধ্যে কুমিলস্নায় মনিরুল হক সাক্কু ও নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকারসহ একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত বিএনপি নেতাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়রির সংসদ নির্বাচন বর্জন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে শতাধিক উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে