মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
দুই জেলায় আরও ৩ জনের মৃতু্য

ঝালকাঠিতে সিমেন্টবাহী ট্রাক চাপায় নিহত ১৪

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বুধবার ঝালকাঠির গাবখান ব্রিজের টোলপস্নাজায় সিমেন্টবাহী ট্রাক চাপায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ইজিবাইক ও প্রাইভেট কার -স্টার মেইল

ঝালকাঠিতে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক তিনটি ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেট কারকে চাপা দিলে শিশুসহ অন্তত ১৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে বরিশাল-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে শহরতলীর গাবখান ব্রিজের টোলপস্নাজায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বিভিন্ন গাড়িতে থাকা অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ১১ জনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বুধবার নওগাঁ ও বাগেরহাটে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও তিনজন। এ নিয়ে ৪ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকালে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়। এতে বাহনগুলোসহ ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ইজিবাইক ও প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাতজন। আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক আরও চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করলে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় ট্রাকের চালক ও সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চালকের নাম আল আমিন হাওলাদার। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদরের নবগ্রামে। আর সহকারী নাজমুল শেখ খুলনা সদরের বাসিন্দা।

ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন এইচ এম জহিরুল জানান, দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও দুইজন। আহত অনেকের অবস্থাই গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

নিহতদের সবার পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জানা গেছে, বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চারটি ইজিবাইকে কনের বাড়ির লোকজন ঝালকাঠির ছাগলকান্দার শশীর হাটে বরের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে গাবখান সেতুতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দুটি ইজিবাইকের যাত্রী। এতে ওই পরিবারের বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। বাকিরা হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

বরিশালে মারা যাওয়া দুইজন হলেন- পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার মেসন্ডা এলাকার সুবিদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৭০) এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামনগর এলাকার বাদশা মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম (৩৫)।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বৌভাত অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন রুবেল হোসেন (৩০)। যে দুটি ইজিবাইক আগেই টোল পস্নাজা পার হয়ে যায় তার মধ্যে ছিলেন তিনি। ফলে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান রুবেল। পরে খবর পেয়ে তিনি আহত স্বজনদের নিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন।

রুবেল হোসেন বলেন, 'গাবখান ইউনিয়নের ওস্তকার মাঝি বাড়ি থেকে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ছাগলকান্দা শশীর হাটে যাইতেছিলাম বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে। গাবখান ব্রিজ পার হইয়া চারডা অটো (ইজিবাইক) নিয়া যাইতেছিলাম। দুইটা অটো পাশ কইরা গেছে। দুইটা টোল দিতেছিল। পেছন থেকে ট্রাক আইসা আমরার ওই দুইটা অটো পস্নাস আরও দুইটা অটোরে মাইরা দিছে। ব্রেক ফেইল কইরা মাইরা দিয়া ও নিজে গর্তে পইড়া গেছে।'

তিনি জানান, তার নিজের পরিবারের তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও সাতজন।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত রুহুল আমিনের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার মেয়েজামাই গাবখানের বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন। তিনি বলেন, 'ছাগলকান্দা আমরা ভাইঝি বিয়া দিছি। সেইখানে আমরা মেলা করছি (রওনা দিয়েছি)। আমরা সামনের গাড়িতে, তারা পিছের গাড়িতে, অটোতে। চারডা অটোতে মেলা করছি; দুইডা অটো সামনে গেছে। দুইডা পিছে টোল দেয়; আর ট্রাক আইয়া মাইরা দিছে। আমাগো লোক মারা গেছে পাঁচ-ছয়জন।'

ঝালকাঠির রামনগরের বাদশা মিয়ার ছেলে সাইদুল জানান, তার প্রতিবন্ধী ভাই শহীদুল (৪৫) গাবখানে ভিক্ষা করেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফরহাদুল নিঝুম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন করে দুর্ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা করে সহায়তা করা হবে।'

১১ দিনে ১৮৯ জনের মৃতু্য

বিআরটিএর হিসাবে, গত ৪-১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের আগে ও পরের ১১ দিনে সারাদেশে ১৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৯ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ এ সময় প্রতিদিন গড়ে ১৭ জনের প্রাণ গেছে সড়কে। ১১ দিনে আহত হয়েছেন ২৭৮ জন।

সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করা বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে সারাদেশে সাড়ে ২৮ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৪৬ হাজার জন। এই পাঁচ বছরে প্রতিবছর গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন।

নওগাঁ প্রতিনিধি রুহুল আমিন জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ইয়াদআলীর মোড় এলাকায় দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক দম্পত্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তাদের পাঁচ বছর বয়সি সন্তানসহ আরেক মোটর সাইকেল চালক।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালি গ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে এনামুল হক (৪০) ও তার স্ত্রী মোছা. বৃষ্টি খাতুন (৩২)।

নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক জানান, 'সকালে ওই দম্পত্তি সন্তানসহ মোটর সাইকেলযোগে নওগাঁ শহর থেকে সান্তাহারের দিকে যাচ্ছিলেন। ইয়াদআলীর মোড় এলাকায় বিপরীত দিক থেকে দ্রম্নতগতিতে আসা আরেকটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান এনামুল-বৃষ্টি দম্পত্তি। ভাগ্যক্রমে তাদের পাঁচ বছর বয়সি শিশু সন্তান জুনাইদ বেঁচে যায়।'

ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আহত জুনাইদ ও মোটর সাইকেল চালককে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাট প্রতিনিধি ইসরাত জাহান জানিয়েছেন, বাগেরহাটের মোলস্নাহাট উপজেলায় সড়ক দুঘটনায় রাজা মিয়া (২৪) নামে বাসের সহকারী নিহত হয়েছেন।

জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের পরিদর্শক সৈয়দ বাবুল আক্তার জানান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মোলস্নাহাট উপজেলার কেন্দুয়া ব্রিজ এলাকায় বুধবার রাত ৩টার দিকে খুলনাগামী জিএমএস পরিবহণের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপরই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে মারাত্মক আহত বাসের সহকারী রাজা মিয়াকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে