সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত ও মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখুন : প্রধানমন্ত্রী
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

ইসরাইলে ইরানের হামলার পর তৈরি হওয়া উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে মন্ত্রীদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করছেন বলে জানান তিনি।

বেঠকে ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত ও মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

1

এপ্রিলের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনসু্যলেটে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে; যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করছে ইরান। এর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার রাতে ইসরাইলের ভূখন্ডে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এ ঘটনায় ইরাক, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে একদিনের জন্য বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয় কিনা বিশ্লেষকরা সেই আশঙ্কা করছেন। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাসের জোগানদাতা অঞ্চল।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'মিডলইস্টে এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেদিকে নজর রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয়কে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্য রি-অ্যাকশন কী হতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি হলে সেটা মোকাবিলা কীভাবে করা হবে সেজন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।'

তিনি বলেন, 'ঘটনা প্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পর্যালোচনা করছেন। মন্ত্রণালয়গুলোকেও পর্যালোচনা করতে বলেছেন। কী কী করতে হবে সেটা ঠিক করতে বলেছেন।'

মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রম্নত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্যাবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদিত সিদ্ধান্ত এখনো কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে তার কারণও জানতে চেয়েছেন তিনি।

সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, 'মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুমোদন পাওয়া ১৬টি আইন রয়েছে- যা এখনো আইন আকারে উপস্থাপনের জন্য সংসদে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৪টি আইন রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হলে কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, এখনো কেন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, তা বিস্তারিত আকারে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।'

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, 'যেসব আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পরও সংসদে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো সম্ভব হয়নি- কেন তা সম্ভব হয়নি, সে বিষয়ে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কবে নাগাদ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বা আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা তাও জানাতে বলেছেন তিনি। প্রয়োজনে সেসব সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলেও যেন তা মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হয়, সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।'

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সচিব বলেন, ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সামরিক সরকারের আমলের যেসব অধ্যাদেশ বর্তমানে প্রযোজ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে- সেগুলোকে আইনে রূপান্তর করার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া ওই অধ্যাদেশটি ইংরেজি ভাষায় করা হয়েছে। সরকার এ অধ্যাদেশটি বাংলা ভাষায় আইনে রূপান্তর

করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই আলোকে তৈরি করা আইনের খসড়াটি আজ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আইনটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিধান ছিল এখনো সেটাই বহাল রাখা হয়েছে। বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও হাইকোর্ট বিভিাগের বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন নির্বাচন কমশিনাররা।

এ ছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় 'মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪' এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সভা শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, মহেশখালী মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার আওতায় মাতাবাড়ীতে উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়।

তিনি জানান, মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে যাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা যায়, সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধা থেকে শুরু করে উন্নয়নের মৌলিক কিছু অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সামগ্রিক কিছু অঞ্চল চিহ্নিত করে উন্নয়ন কর্মকান্ড করা যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশকিছু কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। পুরো কাজ এখন আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় করছে।

তিনি জানান, সমন্বিতভাবে এসব কাজ করতে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে ১৭ সদস্যের বোর্ড থাকবে।

সচিব জানান, 'কর্তৃপক্ষের মূল কাজ হবে নির্ধারিত এলাকায় ভূমি ব্যবহারের মাস্টারপস্ন্যান করে তা বাস্তবায়ন করা। যাদের ভূমি দেওয়া হবে, তারা যেন যথাযথভাবে কাজ করেন। মূল লক্ষ্য হবে বিদেশি বিনিয়োগ। এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের নিট টাইম যেন কম হয়।'

তিনি আরও বলেন, '৫৫ হাজার ৯৬৮ একর জমি নিয়ে প্রকল্প এলাকার যে মাস্টারপস্ন্যান হবে, সেখানে যেন পরিবেশ সংরক্ষণ করা হয়, লবণ চাষ, পান চাষও যেন সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যাতে ঘটে, তাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে এটি করা হচ্ছে।'

কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে পুনরায় আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। কক্সবাজারে কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় হবে। ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস করা যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে