বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
তাপমাত্রা উঠেছে ৫০ ডিগ্রি!

রেললাইনের গতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রেললাইনের গতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ

প্রচন্ড গরমে চারদিকে হাঁসফাঁস অবস্থা। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ছুঁইছুঁই। এই গরমে দেশের রেললাইনগুলোতে তাপমাত্রা গিয়ে ঠেকছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কোথাও তারও বেশি। এতে লাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষ গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানের রেললাইনের বয়স বিবেচনায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটাকে রেলের ভাষায়, স্ট্যান্ডিং অর্ডার বা স্থায়ী আদেশ বলা হয়। কারণ, প্রতি বছরই গরমের সময় এই ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকে রেল কর্তৃপক্ষ। মূলত বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গতি কমানো হয়। কারণ, এই সময়টাতেই রেললাইন বেশি গরম হয়।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, পৃথিবীর উপরিভাগে যত তাপমাত্রা থাকে, রেললাইনে তার চেয়ে ১০ বা ১২ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা তৈরি হয়। রেলের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাছে রেললাইনের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রয়েছে। তারা মেপে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেলেই গতি কমানোর নির্দেশনা আসে। এই তাপমাত্রায় নতুন লাইন বেঁকে যেতে পারে। লোহার পাত জোড়া দিয়ে দিয়ে সমান্তরাল রেললাইন বসানো হয়। জোড়াগুলোর জায়গাতে সামান্য ফাঁকা

রাখা হয়। যাতে তাপে লোহার সম্প্রসারণ হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু অত্যধিক তাপে সম্প্রসারণ বেশি হয়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

রেলওয়ের টঙ্গী জংশন স্টেশন মাস্টারের মঙ্গলবারের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওইদিন রেলপথের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পাওয়া গেছে। এ জন্য জনস্বার্থে টঙ্গী থেকে নরসিংদী এবং টঙ্গী থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর অংশে আসা-যাওয়ার সব ধরনের ট্রেন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করবে। একইভাবে সারাদেশে নিজ নিজ অঞ্চলের কর্মকর্তারা তাপমাত্রা মেপে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত বা গোটা রেলপথে গতিসীমা আরোপ করেছে।

রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, 'গতিসীমা কমানোর বিষয়টি সময় সময় পরিবর্তন করা হয়। তাপমাত্রা কমে গেলে আবার স্বাভাবিক গতিতে চলার অনুমতি দেওয়া হয়। তাপমাত্রা বাড়লে গতিসীমা কমানো হয়।

রেলের পূর্বাঞ্চলসহ (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) লালমনিরহাট অঞ্চলে মিটারগেজ রেললাইন। এসব লাইনে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। আর পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের একাংশ) ব্রডগেজ রেললাইন। এসব স্থানে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। মালবাহী ও লোকাল ট্রেনগুলোর গতি কম থাকে। আর আন্তঃনগর ট্রেনের গতি বেশি।

রেলওয়ের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা সরদার সাহাদাত আলী বুধবার বলেন, 'গরমে সতর্কতার অংশ হিসেবে ট্রেনের গতি কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবারও সারাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গতি কমিয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেলের কর্মীদের রেললাইনের তাপমাত্রা পরীক্ষা করাসহ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথের বিভিন্ন স্থানে নির্দেশিত গতি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিতভাবে ট্রেন চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

গত সোমবার থেকেই পূর্বাঞ্চল রেলপথের বিভিন্ন স্থানে ৪৮ থেকে ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যে কারণে ওইদিন দুপুর থেকে বিকাল নাগাদ ওই পথের আন্তঃনগরসহ সব ধরনের ট্রেনের গতি কমিয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল করতে পারেনি।

এ বিষয়ে লোকো রানিং স্টাফ সমিতি আখাউড়ার সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'গরমের দিনে যখন তাপ বেশি থাকে তখন গতি কমিয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সোমবার সকালে তিতাস কমিউটার ট্রেন নিয়ে আখাউড়া থেকে ঢাকা আসতে কয়েকটি জায়গায় বিভিন্ন কারণে গতি কমিয়ে চলার নির্দেশনা ছিল। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তালশহর স্টেশনের মাঝে একটি জায়গায় যেখানে সম্প্রতি দুর্ঘটনা ঘটে সেখানে ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলার নির্দেশনা ছিল।'

এ ব্যাপারে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) মো. মেহেদি হাসান তারেক জানান, তার আওতাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ ও আখাউড়া- সিলেট পথের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন নাগাদ গতি কমিয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। দুপুর একটা থেকে ৫টা নাগাদ যাত্রীবাহী ট্রেন সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার ও মালবাহী ট্রেন সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলার নির্দেশনা ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে