শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

গাঁজার কেক সেবনে দ্রম্নত স্মৃতিশক্তি লোপ পায়

গাফফার খান চৌধুরী
  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
গাঁজার কেক সেবনে দ্রম্নত স্মৃতিশক্তি লোপ পায়

সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসা গাঁজার চকোলেট বা চুইনগাম ও কেক গাঁজার নির্যাস থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। গাঁজার নির্যাস থেকে তৈরি এসব মাদক সেবনে দ্রম্নত মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। একই সঙ্গে ক্যানসারসহ শরীরে জটিল রোগ বাসা বাঁধে। শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বিকল করে দেয়। যার সর্বশেষ পরিণতি নিশ্চিত মৃতু্য বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক গবেষণাগারের গবেষকরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আমেরিকা থেকে পার্সেলে আসা প্রায় কোটি টাকা মূল্যের টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল যুক্ত কুশ, ক্যানাবিস চকোলেট বা চুইনগাম ও ক্যানাবিস কেক জব্দ করা হয়। পরে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক গবেষণাগারে।

জব্দ মাদকের বিষয়ে গবেষণাগারের প্রধান রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ দুলাল চন্দ্র সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, মাদকগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত আছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যে তথ্য পাওয়া গেছে তা সত্যিই খুবই ভয়াবহ। ইতোপূর্বের্ যাবের অভিযানে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল যুক্ত কুশ জব্দ হওয়ার রেকর্ড আছে। এছাড়ার্ যাবের অভিযানে ইতোপূর্বে গুলশান থেকে গাঁজার চকোলেট বা চুইনগাম জব্দেরও নজির আছে।

তিনি বলেন, কিন্তু বিদেশ থেকে আসা গাঁজার কেক জব্দের কোনো নজির বাংলাদেশ নেই। এটিই প্রথম। এসব চকোলেট ও কেক তৈরির পিছনে বহু কারণ আছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এ ধরনের মাদক বহু মানুষের সামনেই খাবার হিসাবে খাওয়া যায়। যেটি সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই জানা সম্ভব নয়। একমাত্র সেবনকারীরাই জানেন, তারা মাদক সেবন করছেন।

পরিবারের সদস্য ছাড়াও স্ত্রী, সন্তানদেরও জানার কোনো সুযোগ নেই। যদি তারা বিষয়টি সম্পর্কে না জানেন।

তিনি আরও বলেন, মূলত এমন কৌশলী মাদক তৈরি করা হয়েছে প্রকাশ্যে সেবনের উদ্দেশ্যেই। বিশেষ কায়দায় কয়েক স্তরে পরিশোধন করে গাঁজার চকোলেট ও চুইনগাম এবং কেক তৈরি করা হয়। সবার সামনে এসব খেলে সবাই মনে করবেন খাবার খাচ্ছেন। আসলে তিনি মাদক সেবন করছেন। যা কারো মাথায় আসার নূ্যনতম কোনো সুযোগই নেই।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গাঁজা কয়েক স্তরে ফিল্টারিং করে নির্যাস তৈরি করা হয়। সেই নির্যাস দিয়ে তৈরি করা হয় গাঁজার কেক। এই কেক এতটাই ভয়ংকর যে, এক কেজি গাঁজা সেবন করার পর একজন মাদকসেবী বা মানুষের যে পরিমাণ নেশা বা যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, ঠিক সেই রকম অবস্থার সৃষ্টি হয় গাঁজার নির্যাস থেকে তৈরি করা এক গ্রাম কেক খাওয়ার পর। যা রীতিমতো পরীক্ষায় ওঠে এসেছে।

তিনি বলেন, 'এই কেক খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র যেকোনো সময় বিকল হয়ে পড়তে পারে। কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। উচ্চ রক্তচাপ বাড়বে। দ্রম্নত লোপ পেতে থাকবে সেবনকারী ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি। সেবনের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই ব্যক্তি কী করছেন বা কোথায় অবস্থান করছেন, তা তার পক্ষে কোনোভাবেই জানা সম্ভব হবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া হ্যালোসিনেশনের সৃষ্টি হবে। যেটি মূলত সিজোফ্রেনিয়া রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তি এ ধরনের মাদক একবার বা একাধিকবার সেবন করলে তার শরীর শুকিয়ে যাবে। মুখ চুপসে একেবারে চুপসে বা গর্তে ঢুকে যেতে বাধ্য। খাবারে কোনো ধরনের রুচি হবে না। অনিদ্রা দেখা দিবে। রক্ত চলাচল অস্বাভাবিক হয়ে পড়বে। রক্তশূন্যতা দেখা দিবে। যেকোনো সময় স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। সেবনকারীর লিভার, স্কিন, ফুসফুস, মুখ গহ্বরে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এ ধরনের মাদক সেবনে চমড়ায় ফুসকুড়ি উঠবে। এক সময় চামড়ায় কোনো ধরণের অনুভুতি থাকবে না। শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলা যায়, স্কিন ক্যানসার হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মোট কথা এই ধরনের মাদকসেবীদের শেষ পরিণতি ধুঁকে ধুঁকে মৃতু্য। এমন মাদকে আসক্তদের শরীরে সাধারণত কোনো ধরনের ওষুধই কাজ না করবে না। খুবই দামি এই মাদক। সমাজের সাধারণ বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের এ ধরনের মাদক সেবনের আর্থিক সক্ষমতা নেই। এসব মূলত অর্থশালী মানুষের মাদক। কারা কী উদ্দেশ্যে এসব মাদক আমদানি করেছে তা গভীরভাবে তদন্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমেরিকার মতো একটি উন্নত দেশ থেকে কীভাবে এ ধরনের মাদক বাংলাদেশ প্রবেশ করল সেটি গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। কারণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সরাসরি বাংলাদেশে কোনো ফ্লাইট নেই। এতগুলো চেকপোস্ট পার হয়ে মাদকটি ডাক বিভাগের পার্সেলে করে পল্টন পর্যন্ত চলে এলো, অথচ কোথাও কোনো এয়ারপোর্টে বিষয়টি ধরা পড়ল। যা রীতিমত রহস্যজনক। এজন্য বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রাগ স্ক্যানার বসানোর পরামর্শ দেন তিনি। অন্যথায় মাদক মাফিয়ারা বাংলাদেশকে মাদক পাচার বা ব্যবহারের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলবে। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে গ্রামেগঞ্জে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের মাদকের ব্যবহার বাড়লে দামও সস্তা হবে। তখন বাংলাদেশকে মাদক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ডাক বিভাগের বৈদেশিক ডাক শাখা হতে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য হতে আগত একটি পার্সেল হতে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল যুক্ত কুশ, ক্যানাবিস চকোলেট ও ক্যানাবিস কেক জব্দ হয়। জব্দ হওয়া দ্রব্যগুলো মাদক বলে চিহ্নিত করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। জব্দ হওয়া মাদকগুলো একটি কার্টনের ভিতর ৬টি পলি প্যাকেটে টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলযুক্ত কুশ (যা আমেরিকার তৈরি), প্রতি পলি প্যাকেটে ২২৫ গ্রাম করে মোট ১ হাজার ৩৫০ ছিল। কার্টনটির ভিতরে আমেরিকার তৈরি প্রতিটি ২৮ গ্রাম ওজনের ৯টি গাঁজার চকলেট মোট ২৫২ গ্রাম ও কাটুনে আমেরিকার তৈরি গাঁজার ১০টি কেক ছিল। প্রতিটি ৬০ গ্রাম করে মোট ৬০০ গ্রাম ওজনের গাঁজার কেক ছিল।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় রাসেল মিয়া (২০), রমজান মিয়া (২১) ও ইমরান ওরফে রাজ (২০) নামের তিনজনকে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে