শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক

পাবনা প্রতিনিধি
  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পাবনায় ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক

অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে ঠিকাদাররা পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুই প্রকৌশলীকে ঘুষের টাকা দিচ্ছিলেন। অনৈতিক এই লেনদেন ভেস্তে যায় অনুসন্ধানী একদল সাংবাদিকদের প্রচেষ্টায়। পুলিশ ও দুদক টিমের অভিযানে অনৈতিক লেনদেনকৃত টাকাসহ দুই প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়ছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের দিকশাইল গ্রামের মিনহাজুল ইসলামের ছেলে পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা (২৯) এবং কুমিলস্নার মেঘনা থানার শিবনগর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে একই কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন (৪২)। এদিকে পুলিশ ও দুদকের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজিব ও কনকসহ কয়েকজন। এ সময় ওই দুই প্রকৌশলীর কক্ষ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যার পর তাদের পুলিশ আটক করে সদর

থানায় নিয়ে যায়। বুধবার দুপুরে ৫৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের পর পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও থানার নথি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে পাবনা পাউবোতে অনুসন্ধানের কাজে যান পাবনার কয়েকজন সাংবাদিক। তারা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার নক করার পর মাসুদ রানা দরজা খোলেন। ভেতরে ঠিকাদার ও স্থানীয় সাবেক কমিশনার আরিফুজ্জামান রাজিব, ঠিকাদার কনক ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখা যায়। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখতে পান সাংবাদিকরা।

এ সময় সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কিসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশকে জানান ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যান দুই ঠিকাদার। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) খবর দেন। সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন দুদক ও পুলিশ। পরে সন্ধ্যার পর তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পাউবো চত্বরে উপস্থিত আনিছুর রহমান মারুফ নামের এক ঠিকাদার সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রত্যেক অফিসের কাজে কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না হলে কাজের বিল আটকে দেওয়া হয়। এই কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত। যাতে অন্য কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।'

তবে তানভীর আহমেদ দীপ নামের আরেক ঠিকাদার বলেন, 'আটক দু'জন ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। কারণ তারা মাত্র কয়েকমাস হলো এখানে যোগদান করেছেন। এত দ্রম্নত এসব টাকা লেনদেন করবে এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধা মতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়েছেন বলে ধারণা তার।'

অপর একটি সূত্র বলছে, ঈদের আগে বেশকিছু বিল পাস হয়েছে। সেই বিলের ৩ শতাংশ কমিশন ঠিকাদাররা দিতে এসেছিলেন। হয়তো সেই কমিশনের টাকা এটা হতে পারে।

এ বিষয়ে পাবনা পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, 'ঘটনাটি জানতে পেরেছি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছেন। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, 'পাবনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ আমাদের ফোন করে জানান যে, সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ দুই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করে থানায় আনা হয়। বুধবার আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ৫৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। মামলাসহ আইনগত অন্যান্য প্রক্রিয়া চলমান। তারপরও ঘটনাটি যেহেতু দুদকের বিষয়। তারা এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবে।

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মন্তব্য করতে রাজী হননি দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনা শাখার কর্মকর্তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে