শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের পদত্যাগ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের পদত্যাগ
লি সিয়েন লুং

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং পদত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। লি সিয়েনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশটিতে এক রাজনৈতিক যুগের অবসান ঘটল। খবর : বিবিসি।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, বুধবার রাতে পদত্যাগের পর লি আনুষ্ঠানিকভাবে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওং এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুর স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মাত্র চারজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। চারজনই ছিলেন পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) প্রতিনিধি।

1

সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লি সিয়েন এর বাবা লি কুয়ান ইউ, যিনি ২৫ বছর ধরে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, লি পরিবারের ছায়া থেকে

দূরে সরে যাওয়ার কারণে সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নতুনভাবে বিকশিত হবে। যদিও লি সিয়েন লুং এখনো ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় থাকবেন।

লি এ সপ্তাহান্তে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ সাক্ষাৎকারে সিঙ্গাপুরের জনগণকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

লি এও বলেন যে, তিনি কাজ করার চেষ্টা করেছেন তার নিজের মতো করে, যা তার বাবা এবং পূর্বসূরি গোহ চোক তং এর থেকে আলাদা। লি তার বাবা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থাতেই ১৯৮৪ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক তং-এর আমলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপর ২০০৪ সালে লি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।

রাজনীতিতে প্রথম বছরগুলোতে লি নানা পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সমালোচকরা তার পরিবারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও একটি রাজনৈতিক রাজবংশ গঠনের অভিযোগ এনেছিল, যা তিনি বারবার অস্বীকার করে এসেছেন। কিন্তু দুই দশক ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি তার কাজ দিয়ে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন সাধন করেছেন। তার নেতৃত্বেই সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয়েছে। দেশটি বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

গত দুই দশকে জনপ্রতি জিডিপি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। মন্দা, বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুরকে সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য লি ও তার প্রশাসনের অবদান আছে।

আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন লি সিয়েন লুং। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের ওপর পরিচালিত জরিপে লি শীর্ষে অবস্থান করার পাশাপাশি নির্বাচনের সময় তার নির্বাচনী এলাকায় ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে এসেছেন।

তবে এই বিপুল জনপ্রিয়তার পরও লি সমালোচনা কিংবা বিতর্ক এড়াতে পারেননি। ২০০০ সালের শেষদিকে লি সরকার দেশে শ্রমিক সংকট সামাল দিতে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী নেওয়ায় গণঅসন্তোষ দেখা দেয়।

সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সামাজিক বৈষম্য ও আয়ের অসমতা বেড়ে যাওয়ায় লি ও তার প্রশাসন সমালোচনার শিকার হয়। ফলে তার নেতৃত্বে ২০১১ ও ২০২০ সালে পিপলস অ্যাকশন পার্টি দেশটির ইতিহাসের সর্বনিম্ন ভোট পায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে