উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ রাতে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো একটি এয়ার এ্যাম্বুলেন্স যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কাতারের দোহা হয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নামার পর তাকে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
সোমবার বেগম জিয়ার চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বিশেষায়িত হাসপাতাল 'লন্ডন ক্লিনিকে' বিএনপি চেয়ারপারসনকে ভর্তি করা হবে। সেখানকার চিকিৎসকরাই তার চিকিৎসার বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেবেন।
বহুবিদ রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিএনপির। দলটি এই দাবিতে আন্দোলন করেছে। তার পরিবারের তরফ থেকেও সরকারের কাছে বারবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনোটিই কাজে আসেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সব দ্বার উন্মুক্ত হয়। বেগম জিয়া মুক্তি পান। একইসঙ্গে তার উন্নত চিকিৎসার প্রস্তুতি শুরু করে দলটি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন করে অবশেষে তিনি আজ লন্ডনে যাচ্ছেন। বেগম জিয়ার এই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আবেগ কাজ করছে। বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
এর আগে গত রোববার রাতে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। জানা গেছে, সেই সাক্ষাতে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। শীর্ষ নেতারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বেগম জিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করেন। শত জুলুমের পরেও তিনি যে ভেঙ্গে পড়েননি তা তুলে ধরে দ্রম্নত চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকালে বেগম জিয়া বেশ হাসিখুশি ছিলেন বলেন জানান এক নেতা।
ভর্তি হবেন 'লন্ডন ক্লিনিকে'
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন সোমবার গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আজ রাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে পরদিন লন্ডন পৌঁছে লন্ডন ক্লিনিক হাসপাতালে ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, 'লন্ডন ক্লিনিক' পুরনো ঐহিত্যবাহী হসপিটাল। সেই হসপিটালে উনাকে ভর্তি করা হবে। হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে থেকে উনাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই হসপিটালে উনি চিকিৎসাধীন থাকবেন।
জাহিদ বলেন, 'ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে। সর্বোপরি উনার লিভারের জটিলতাটা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস পরবর্তিতে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেট-টু সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস) করা হয়েছে। টিপসের কিছু টেকনিক্যাল আসপেক্ট আছে এডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে। হার্টে উনার বস্নক ছিল একাধিক। আমরা খালি লাইভ সেইভিং করার যেটুকু সুযোগ ছিল সেইটুকু করতে পেরেছি। কারণ ওই সময়ে উনার শারীরিক সুস্থতা ওইরকম ছিল না।'
তিনি বলেন, 'উনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে সেটা অ্যাডড্রেস করতে হবে। করোনা পরবর্তিতে কিছু জটিলতা হয়েছে সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দেশের ফিজিশিয়ানরা, এভারকেয়ার হসপিটালের স্টাফরা বেস্ট করেছে। এই ব্যাপারে আমাদের ম্যাডাম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিংবা পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ডি-সেটিসফেকশন নাই, সবাই হ্যাপি। উই আর হ্যাপি অলসো, দল হ্যাপি।'
তিনি বলেন, লিভার ট্রান্সপস্নান্টের বিষয়টির সিদ্ধান্ত দেবে লিভার ট্রান্সপস্নান্ট ইউনিটে যাওয়ার পরে। লন্ডনের হাসপাতালে ওই সুবিধাটা আছে। এ বিষয়ে সেখানকার চিকিৎসকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
খালেদা জিয়ার এই বিদেশ যাত্রার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৭ বছর পর লন্ডনে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে। যাত্রাপথে কাতারে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী। বেগম জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সফরসঙ্গী হবেন মোট ১৬ জন। যুক্তরাজ্যে পৌঁছালে সেখানে তাকে সস্ত্রীক স্বাগত জানাবেন তারেক রহমান।
চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ আরও জানান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার জেনে রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছেন। কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
জাহিদ জানান, আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রাজকীয় কাতারের ৪ জন চিকিৎসক এবং প্যারা মেডিক্সগণ থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন সদস্য এই বিমানে যাবেন। এরা হলেন- অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নূরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া প্রসঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, 'যদি তারা (লন্ডন ক্লিনিক) সুপারিশ করেন যে, ইয়েস শি নিডস। তাদের এখানে ব্যবস্থা নাই। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপিটাল নিয়ে যেতে হবে, তখন হয়তো যাওয়ার একটা প্রশ্ন আসে।
ওমরাহ পালনের আগ্রহ আছে
পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাবেন কিনা এ রকম প্রশ্নের জবাবে জাহিদ বলেন, 'মানুষ চাইলেই কিন্তু ওমরাহ করা যায় না। আলস্নাহকে চাইতে হয়। কাজেই রাব্বুল আলামিন যদি কবুল করেন ডেফিনেটলি ম্যাডাম সেটা করবেন। এটা কিন্তু প্রিডিসাইড না যে, এটা করবেনই। হজ্ব এবং ওমরাহ অবশ্যই আলস্নাহকে চাইতে হবে। উনি একজন ধার্মিক মানুষ। মনের ইচ্ছা আছে। উনি সুযোগ পেলে হজ করেছেন, ওমরাহ করেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েক বার। এত নির্যাতন-অত্যাচার, কষ্টের পরে শুকরিয়া আদায় করার জন্য ডেফিনেটলি উনার ওমরাহ পালনের আগ্রহ আছে।'
'দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা'
ডা. জাহিদ বলেন, 'আপনাদের মাধ্যমে সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যারা ম্যাডামের সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করেছেন তাদের সবার কাছে দলের পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই। ম্যাডাম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, দল ধন্যবাদ জানিয়েছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ম্যাডামের আগামী চিকিৎসাটা যাতে সুস্থ হয়ে আলস্নাহর অশেষ মেহেরবাণীতে উনি আবার আমাদের মাঝে ফেরত আসতে পারে সেজন্য দেশবাসীকে দোয়া করার জন্য দলের পক্ষ থেকে সবাই দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। ম্যাডামের পরিবারও ম্যাডামের জন্য দোয়া চেয়েছেন।