বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
গুলশান থেকে শাহজালাল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ঢল, রাস্তার দু'পাশে দাঁড়িয়ে স্স্নেস্নাগান

খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা

লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে সরাসরি পশ্চিম লন্ডনের 'লন্ডন ক্লিনিক' নামের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪০
খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা
খালেদা জিয়া

একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাত ১০ টায় কাতারের আমীরের পাঠানো একটি এয়ার এ্যাম্বুলেন্স যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে রাত সোয়া আটটার দিকে তিনি বিমানবন্দরের উদ্দেশে গুলশানের বাসা থেকে বের হন। তার বাসভবন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছিল। হাজারো নেতা-কর্মী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্স্নোগান দিয়ে তাদের নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান। দলের চেয়ারপাসনকে বিদায় জানাতে বিকেল থেকেই বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাুকর্মী। বিদায় জানানোর সময় জনদুর্ভোগ এড়াতে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আগেই বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে তাতেও দুর্ভোগ পুরোপুরি এড়ানো যায়নি।

1

যুক্তরাজ্য বিএনপি জানিয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় এক ঘন্টা বিরতি দিয়ে আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিমানবন্দরে তাকে ভিআইপি প্রটোকল প্রদান করবে হিথ্রো কর্তৃপক্ষ।

খালেদা জিয়াকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত থাকবেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়াকে সরাসরি পশ্চিম লন্ডনের 'লন্ডন ক্লিনিক' নামক একটি প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তার চিকিৎসা শুরু হবে।

বহুবিধ রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবি বিএনপির ছিল দীর্ঘদিনের। দলটি এই দাবিতে আন্দোলনও করেছে। তার পরিবারের তরফ থেকেও সরকারের কাছে বারবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনটিই কাজে আসেনি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সব দ্বার উন্মুক্ত হয়। বেগম জিয়া মুক্তি পান। একইসঙ্গে তার উন্নত চিকিৎসার প্রস্তুতি শুরু করে দলটি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একাধিকবার বিদেশ যাওয়ার তারিখ পরিবর্তন করা হয়। বেগম জিয়ার এই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আবেগ কাজ করছে।

মঙ্গলাবার রাতে দেশ ছাড়ার আগে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভালোবাসায় সিক্ত হন খালেদা জিয়া। রাত ৮ টা ১৫ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়না হন তিনি। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি কয়েক হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে গুলশানের বাসা থেকে স্কর্ট দিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। বাসার সামনে এবং বিমানবন্দরে দলের সিনিয়র নেতারা বেগম জিয়াকে বিদায় জানান।

বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল লন্ডনে গেছেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে আছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলী রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মো. সাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আল মামুন, শরীফা করিম স্বর্ণা, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজ এবং গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম ও রূপা শিকদার।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, লন্ডন ক্লিনিক পুরনো ঐহিত্যবাহী হসপিটাল। সেই হসপিটালে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হবে। হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে থেকে উনাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।

তিনি বলেন, লন্ডনের হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপারেন্টের সুবিধা আছে। এ বিষয়ে সেখানকার চিকিৎসকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।

চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ আরো জানান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা জেনে লন্ডনে যাওয়ার জন্য রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছেন। কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সোমবার রাতে হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রাজকীয় কাতারের ৪ জন চিকিৎসক এবং প্যারা মেডিক্সরা রয়েছেন।

২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন চিকিৎসকরা। তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন জানানো হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবারই তা উপেক্ষা করে।

২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল। এমন অবস্থায় ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশে খালেদা জিয়া স্থায়ী মুক্তি পান। এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে ওই সুসংবাদ পান তিনি। মুক্তির পরপরই তাকে বিদেশ নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করে বিএনপি।

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা ও এর দিন-তারিখ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল। একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। খালেদা জিয়াসহ সফরসঙ্গীদের কারও কারও ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতাও ছিল। শেষে ৭ জানুয়ারি বিদেশ যাত্রার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয় এবং সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বেগম জিয়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের ভিসাও নিয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রেও যেতে পারেন খালেদা জিয়া। ফেরার পথে তার ওমরাহ করার আগ্রহ রয়েছে।##

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে