চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই চাঙ্গা। দীর্ঘদিন পর তিন নাতনি কাছে পেয়ে মানসিকভাবে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যে চলছে তার উন্নত চিকিৎসার সব আয়োজন।
লন্ডন বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে দাদির পাশে সময় কাটিয়েছেন তার বড় নাতনি ব্যারিস্টার জায়মা রহমান।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, ম্যাডাম লম্বা জার্নি করার পরও অনেকটা সুস্থ। কারণ তিনি দীর্ঘদিন পর পরিবারের সান্নিধ্য পেয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কয়েকটির রিপোর্টও এসেছে। এগুলো পর্যালোচনা করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ম্যাডামের লিভার প্রতিস্থাপন করা যায় কি না, সে ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ড আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও উন্নত চিকিৎসায় ম্যাডামকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'লন্ডন ক্লিনিকে অনেক উন্নতমানের চিকিৎসা হয়। মনে হয় না ম্যাডামকে অন্য কোথাও নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তবুও বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক বলেন, 'আমি ও সংগঠনের সেক্রেটারি কয়সর এম আহমেদ সব সময় হাসপাতালে আছি। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের একজন সদস্যসহ আমাদের তিনজনের হাসপাতালে প্রবেশাধিকার আছে। ম্যাডাম ছেলে ও নাতনিদের কাছে পেয়ে মানসিকভাবে বেশ ভালো আছেন- এটা বোঝাই যাচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিদিন তারেক রহমান ও দুই পুত্রবধূ আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন। ডা. জুবাইদা রহমান বাসা থেকে শ্বাশুড়ির জন্য রান্না করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুয়ায়ী তিনি প্রতিদিন খাবার পরিবেশন করছেন। তিন নাতনি (জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান) দাদির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন।'
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকছেন। মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা রাত ১০-১১টার পর বাসায় চলে গেলেও প্রতিদিন হাসপাতালে থেকে যান ডা. জাহিদ। চিকিৎসক ও সফরসঙ্গীরা হাসপাতালের পাশেই হোটেল থাকছেন।
বৃহস্পতিবার লন্ডনে এক ব্রিফিংয়ে ডা. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আগামী দু-একদিনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্ব শেষ হবে। বড়দিন উপলক্ষে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখনো ছুটিতে আছেন। তারা এসে খালেদা জিয়াকে দেখবেন। সে অনুযায়ী তার চিকিৎসাপদ্ধতি কি হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশ থেকে আসা বোর্ডের সদস্যরাও আছেন। তারাও তাদের (দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসকদের) সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবেন।'
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আরও বলেন, 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী জুবায়দা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শামিলা রহমান ও খালেদা জিয়ার নাতনিরা সব সময় পাশে থেকে তার মানসিক একাকীত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।'
কাতারের আমিরের প্রতি তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় লন্ডন যাত্রায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সঙ্গে কাতার-বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী ও বহুমুখী সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহের কথাও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব লেখেন তারেক রহমান।
ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, 'আমার মা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সদয়ভাবে পরিবহন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য আমি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।'
তারেক রহমান আরও বলেন, 'আমার পরিবার এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে, আমি এই সমর্থনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী, বহুমুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে উন্মুখ।'