বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

টিউলিপকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
টিউলিপকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান
টিউলিপকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান

ব্রিটেনের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানানোর পর দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোট।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, অর্থনৈতিক অপরাধ, অর্থপাচার ও অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধের দায়িত্ব অন্য মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের জন্য টিউলিপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

1

ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজনের কাছ থেকে টিউলিপ ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্ত করছেন ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস।

যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলোর জোট বলেছেন, মন্ত্রীর আচরণবিধি টিউলিপ লঙ্ঘন করেছেন কি না তা স্যার লাউরি খতিয়ে দেখছেন, কিন্তু মন্ত্রীর 'গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব' রয়েছে।

জোটের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক পিটার মুনরো বলেন, 'মন্ত্রীদের নতুন আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, 'বিশ্বাসই আমাদের যুগের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এবং ব্রিটিশ রাজনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়েছে তা আচরণবিধির নিরিখে নতুন সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে হাজির হয়েছে। দুর্নীতি দমন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, তার কার্যভারে এসব স্পর্শকাতর খাতের দায়িত্ব থাকা উচিত নয়।'

টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা গত বছর অগাস্টে ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান। দেশে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। সেখানে টিউলিপের নামও এসেছে।

ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে করা বাংলাদেশের চুক্তিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে টিউলিপের বিরুদ্ধে। ওই প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোট বলছে, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজরের তদন্ত শুরু হওয়া এবং বাংলাদেশে পৃথক তদন্তের আলোকে জোট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, বর্তমানে টিউলিপের গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে।

জোট আরও বলেছেন, 'অর্থপাচার বিধিমালার প্রয়োগ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবেলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং এই কাঠামোর অধীনেই বাংলাদেশের ক্ষমতাচু্যত শাসকের সঙ্গে তার সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখা যেতে পারে।'

আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং হাসিনা প্রশাসনের সদস্য ও সংগঠনের সম্পদ জব্দের প্রশ্নে বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জোট।

ক্ষমতাচু্যত সরকারের সদস্য ও সহযোগীদের সম্পদের সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করতেও জোট ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, লন্ডনে খালা শেখ হাসিনার সহযোগীদের সম্পত্তি ব্যবহার নিয়েও টিউলিপ তদন্তের মুখে পড়েছেন।

লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসনের এমপি টিউলিপ তার নির্বাচনি এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করতেন, যেটা তার ছোট বোন আজমিনাকে 'উপহার' দিয়েছিলেন মঈন গণি নামের এক আইনজীবী, যিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবিও আছে।

আর টিউলিপ নিজে লন্ডনের 'কিংস ক্রস' এলাকায় একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে, যার বর্তমান মূল্য ৭ লাখ পাউন্ড। মোতালিফের সঙ্গেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যোগসূত্র থাকার খবর এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।

ব্রিটিশ মন্ত্রিপরিষদের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি (চ্যান্সেলর অব দ্য ডাচি অব ল্যানকাস্টার) প্যাট ম্যাকফ্যাডেন এর আগে বলেছিলেন, টিউলিপের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে এবং স্যার লরির কাছে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে টিউলিপ সঠিক কাজটিই করেছেন।

তিনি টাইমস রেডিওকে বলেন, 'ছয় মাস আগে আমরা যখন নির্বাচনে জয়লাভ করি, তখন আমরা মন্ত্রিদের নতুন আচরণবিধিতে ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলাম, যাতে এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত শুরু ও তা পরিচালনার ক্ষমতা তার থাকে। এটাই তিনি করছেন এবং এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার এটাই সঠিক উপায়।'

টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মোকাবেলায় চ্যান্সেলরর্ যাচেল রিভসের চীন সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

স্যার লরির কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেছেন, 'তিনি যে কোনো ভুল করেননি সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।'

কনজারভেটিভরা টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে টিউলিপ এসব ডাকাতির সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।

টিউলিপকে ক্ষমা চাইতে ও পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সানডে টাইমসকে বলেছেন, তিনি দুর্নীতি দমনবিষয়ক মন্ত্রী হয়েছেন এবং নিজেকে এখন নির্দোষ দাবি করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে