দ্য লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় লাগছে। বুধবার রাতে হঠাৎ শারিরীক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয় তার। চিকিৎসকরা উন্নতির চেষ্টা করছেন।
এ তথ্য জানিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য লন্ডন থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, 'ম্যাডাম সাত বছর পর লন্ডনে এসেছেন। এই হাসপাতালে এর আগে চিকিৎসা নেননি। দেশে অনেক ধকলের মধ্যে ছিলেন। এই অবস্থায় নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময় লাগছে। লন্ডনে প্রচন্ড ঠান্ডা চলছে।' তিনি জানান, গত দুদিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। স্বাস্থ্যের কয়েকটি প্যারামিটার ফল করেছে। নতুন করে হার্টের কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। যদিও এনিয়ে বড় উদ্বেগের কিছু নেই। মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে আশানুরুপ উন্নতি হয়নি বলে এখনও লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়নি। এজন্য খালেদা জিয়ার ফিটনেস (শারীরিক সক্ষমতা) বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এই চিকিৎসক
\হবলেন, 'লন্ডন ক্লিনিকে বললেই সবকিছু তাৎক্ষণিক হয়ে যায় না। সব প্রক্রিয়া মেনে করতে হয়। ম্যাডাম ছেলের বাসায়ও যেতে চাচ্ছেন। দীর্ঘদিন একটানা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকাও কষ্টের।'
এর আগে বৃহস্পতিবার লন্ডন ক্লিনিকের সামনে ব্রিফিংকালে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, 'ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যগত সব পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পরই 'লিভার প্রতিস্থাপনের' সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সনের শারীরিক ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
ডা. জাহিদ বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে তার বয়স এখন ৭৯ বছর। এ কারণে আদৌ লিভার প্রতিস্থাপন করার মতো শারীরিক অবস্থায় তিনি আছেন কি-না, বা কীভাবে করলে ম্যাডাম আরও ভালো থাকতে পারবেন এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। তবে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণের সময় এখনো আসেনি।'
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় অতি দ্রম্নত যেসব পরিবর্তন আনা দরকার- সেগুলোই চিকিৎসকরা বিবেচনায় নিচ্ছেন বলে উলেস্নখ করেন ডা. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, 'চেয়ারপার্সনের পরবর্তী চিকিৎসা এখন কতটুকু প্রয়োজন সে বিষয়েই আলোচনা হচ্ছে। তার লিভার ডিজিজ এবং হার্টের যে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর রিপোর্ট এখনো কমপিস্নট হয়নি।'
ডা. জাহিদ বলেন, 'দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পরে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তার লিভার, কিডনি, হার্টের জটিলতা রয়েছে। প্রত্যেকটি এ্যাড্রেস করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কাজেই সব মিলিয়ে আগামী কয়েকদিন আরও বেশকিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করবেন এখানকার চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, 'ক্লিনিকের লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বে ৬-৭ জনের একটি মেডিকেল টিম বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে তাদের ডিসিশন, অবজারভেশন শেয়ার করে যে ধরণের বেটার চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন সেটাই দিচ্ছেন।'
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসকার জন্য গত ৮ জানুয়ারি তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।