রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরুত্থানের ঘোষণা ডোনাল্ড ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৬ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরুত্থানের ঘোষণা ডোনাল্ড ট্রাম্পের
ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির কংগ্রেসে অভিষেকের পর প্রথম দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরুত্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, মঙ্গলবারের এ ভাষণের বিরোধিতা করেছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। ট্রাম্প ভাষণ দেওয়ার সময় অনেকে মাঝপথে বেরিয়ে যান। ভাষণের শুরুতে ট্রাম্পকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান রিপাবলিকানরা। তাদের অভিবাদনের জবাব দিয়ে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, দেশের নাগরিকদের বলছি, আমেরিকা তার গৌরব ফিরে পেয়েছে। আমরা এমন এক প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছি- যা বিশ্ববাসী কোনো দিন দেখেনি এবং ভবিষ্যতে হয়ত দেখবেও না। ২০ জানুয়ারি অভিষেকের পর কংগ্রেসে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিলেন তিনি। মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক নীতির পরবর্তী দিন যখন ট্রাম্প এই ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তার সিদ্ধান্তে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তার ভাষণের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণাকালীন বক্তৃতার সাদৃশ্য থাকলেও, ৬

\হনির্ধারিত বক্তব্যের বাইরে উটকো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। তবে তার সমালোচনা থেকে রেহাই পাননি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। এছাড়া, অবৈধ অভিবাসীদের বর্বর বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি। সরকারি বাজেটে ভারসাম্য আনার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে, একই সঙ্গে কর হ্রাসের জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ইতোমধ্যেই ৩৬ ট্রিলিয়ন ঋণে থাকা দেশটিতে আরও পাঁচ ট্রিলিয়ন বৃদ্ধি পেতে পারে। তার ভাষণের সময় বিভিন্নভাবে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। এরকম এক আইনপ্রণেতা, টেক্সাস কংগ্রেসম্যান আল গ্রিন বেরিয়ে যাওয়ার পর ট্রাম্প বলেন, আমার সামনে উপস্থিত ডেমোক্র্যাটদের দিকে একপলক তাকিয়েই আমি বুঝতে পারছি, আমি যাই কিছু করি না কেন, তারা কোনো কিছুতেই খুশি হবেন না বা তাদের মুখে হাসি ফুটবে না। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের যেখানে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প তার ভাষণ দিয়েছেন, সেই ক্যাপিটল হিলে বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর হামলা চালিয়েছিলেন ট্রাম্প ভক্তরা। এবার ক্ষমতায় এসেই দোষী সাব্যস্ত সবাইকে তিনি মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

নিজের বক্তব্যে ধনকুবের ইলন মাস্কের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের আদেশে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সরকারি সক্ষমতা বিভাগের (ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি বা ডোজে) নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাস্ক। ডোজের পরামর্শে ট্রাম্প প্রশাসন এখন পর্যন্ত লাখখানেক কর্মী ছাঁটাই করেছে। এছাড়া, বৈদেশিক সহায়তায় কোটি কোটি ডলার স্থগিতসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতেও তহবিল আটকে রাখা হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, শত শত বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি চিহ্নিত করে যথাযথ পরামর্শ দিয়েছেন মাস্ক। যদিও তার এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তবে ট্রাম্প তার বক্তব্যে একটি বিতর্কিত ঘোষণা দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেবল নারী এবং পুরুষ ছাড়া আর কোনো লিঙ্গের মানুষের জায়গা হবে না। এ বক্তব্যে লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে ট্রাম্পের দৃঢ় অবস্থান ফুটে ওঠে।

ট্রাম্প বলেন, আমরা একটি নতুন সরকারি নীতি গ্রহণ করেছি। আমাদের দেশে কেবলমাত্র দুটি লিঙ্গের মানুষ থাকবে, নারী এবং পুরুষ। তিনি আরও বলেন, স্কুলগুলোতে জাতিতত্ত্বের বিষ মুছে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, শিক্ষাব্যবস্থায় আর কোনো 'জেন্ডার স্টাডিজ' বা লিঙ্গ পরিচয়ের বিষয় পড়ানো হবে না। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আমেরিকায় 'প্রগতিবাদী' লিঙ্গ পরিচয়ের ধারণা ও শিক্ষা পদ্ধতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রম থেকে লিঙ্গ পরিচয়বিষয়ক শিক্ষার পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এরকম কোনো শিক্ষার প্রচলন করা হবে না। ট্রাম্প তার ভাষণে আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যেই পেশাতেই আপনি থাকুন, ডাক্তার, আইনজীবী, অ্যাকাউন্ট্যান্ট অথবা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার, আপনাকে শুধু মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপনাকে পদোন্নতি বা কাজের সুযোগ পেতে হবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। লিঙ্গ বা জাতি পরিচয়ের ওপর কোনো ধরনের প্রাধান্য দেওয়া হবে না। এছাড়া, ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে আর কোনো ট্রান্সজেন্ডার নিয়োগ করা হবে না। এই ঘোষণায় তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীতে যারা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে কাজ করছেন, তাদের জন্য কোনো লিঙ্গ পরিবর্তন বা সেই সম্পর্কিত সুবিধা আর দেওয়া হবে না। এমনকি, ট্রাম্প দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর ২৭ জানুয়ারি একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেখানে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় রূপান্তরকামীদের জন্য গ্রহণ করা কিছু নীতির পরিবর্তন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। বাইডেন প্রশাসন রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা লিঙ্গ পরিচয়ের ব্যবস্থা রেখেছিল, কিন্তু ট্রাম্প এখন সেই নীতি ফিরিয়ে নেবেন। এভাবে, ট্রাম্প তার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রগতিশীল লিঙ্গ পরিচয়ের বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন- যা তাকে সমালোচকদের চোখে আরও একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হিসেবে উপস্থাপন করছে।

\হসূত্র: বিবিস ও রয়টার্স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে