শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজু ও অতিথি পাখি

কত নামের অতিথি পাখি! আলতিরাঙ্গা, নলগুঘা, চেরো এমন সব নাম। নামের সঙ্গে এসব পাখিদের আকারেও আছে ভিন্নতা। ধানের ক্ষেতের পোকামাকড় খেয়েই বেঁচে থাকে ওরা। এসব পাখিদের কারণে ফসলি পোকার আক্রমণ কম হয়।
তারিকুল ইসলাম সুমন
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাজু ও অতিথি পাখি
রাজু ও অতিথি পাখি

পাখিটা কাঁপছে। ডানা দুটো পিঠের দুপাশে ঠিকঠাক রাখতে পারছে না, একটু ঝুলে আছে। দুটো চোখ বুজে ঝিম ধরে আছে। পাখিটির নাম জানে না রাজু। ওটা যে শীতের পাখি বুঝতে পেরেছে সে। এতক্ষণে খুব খেয়াল করে পাখিটাকে দেখছিল নয় বছরের ছোট্ট রাজু। পেছন থেকে ধীর পায়ে নানা এসে দাঁড়ালেন।

নানা এসেছেন পাখিটিকে খাঁচা থেকে বের করতে। জবাই করতে হবে। রাজু আসবে খবর শুনেই দারুণ খুশিতে আছেন নানা। রাতে পাখি শিকারি খলিলের কাছ থেকেই পাখিটি কিনে এনেছেন তিনি। নাতিকে অতিথি পাখির মাংস খাওয়াতে হবে। শহরে কি আর এগুলো পাওয়া যায়?

1

প্রতিবার শীত এলেই অতিথি পাখির ডাকে মুখরিত হয় নোয়াইলতলা গ্রামের পাশের এই দখিনা বিল। কত নামের অতিথি পাখি! আলতিরাঙ্গা, নলগুঘা, চেরো এমন সব নাম। নামের সঙ্গে এসব পাখিদের আকারেও আছে ভিন্নতা। ধানের ক্ষেতের পোকামাকড় খেয়েই বেঁচে থাকে ওরা। এসব পাখিদের কারণে ফসলি পোকার আক্রমণ কম হয়। উপকার হয় ফসলের। আর সুযোগ পেয়ে এ সময়েই বিলে নেমে পড়ে কিছু পাখি শিকারি। ফাঁদ পাতে, এক ধরনের সূক্ষ্ণ জাল পাতে ধানের আইলে। সপ্তাহে হাটবার এলেই গোপনে এসব পাখি বিক্রিও হয় স্থানীয় হাটে।

রাজুকে নিয়েই পাখিটিকে জবাই করবেন নানা। রাজুর জোরালো আবদার, পাখিটিকে একটু আদর করবে সে। এখনই জবাই করতে দেবে না। এবার যেন একটু সমস্যায় পড়লেন নানা। কি আর করা, তাই হোক। এ সময় পাশের পালং শাকের ক্ষেতে ঢুকলেন তিনি। ক্ষেতে লাগানো ধনিয়া, পালং, টমেটো, লাল ও সবুজ শাক। থকথকে সবজির শরীর কুয়াশায় ভিজে আছে। এদিকে রাজু তখন পাখিটিকে আদর করতে ভীষণ ব্যস্ত। চোখ দুটি পিটপিট করছে পাখির।

পাখির দুটি পা ধরে আছে রাজু, অন্য একটি হাত মাথায়। হঠাৎ রাজুর মন ছুটে গেল ভাবনার জগতে। ইশ! প্রতিবার সেই সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পরিবারসহ উড়ে আসে বহু পাখি। প্রতিটি পাখির মা-বাবা ভাইবোন দাদু-নানি আছে নিশ্চয়ই। শীত শেষ হলে সব পাখি হয়তো নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে না, অনেকেই ধরা পড়ে শিকারির জালে। মানুষ কেন ওদের শিকার করে? নিরাপদে ভ্রমণ শেষ করে ওদের আবার ফিরে যেতে দেয়া উচিৎ। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাজু।

নানা কাজ শেষ করে ফিরে এসেছেন রাজুর কাছে। হাতে একটা চকচকে ছুরি। পাখিটি এখনই জবাই করতে হবে। কি একটু ভাবল রাজু। পাখির পা ধরা হাতটি আলতো করে ঢিলা করল সে। এবার ডানা দুটিও শক্ত করে ধরা নেই তার। সুযোগ পেয়ে পাখিটিও নড়েচড়ে একটু সতেজ হলো। হঠাৎ ফুড়ুৎ করে উড়াল দিয়ে জলপাই গাছে গিয়ে বসল। হায় হায় বলে চিৎকার দিয়ে উঠলেন নানাভাই। হাসতে হাসতে রাজুকে বললেন তিনি, ছোট্ট এই পাখিটিকে ধরে রাখতে পারলে না নানু ভাই, উড়িয়ে দিলে?

হেসে উঠল রাজু, অনেক কথা শোনালো নানা ভাইকে। অ-নে-ক কথা। পাখিটা সে ইচ্ছা করেই ছেড়ে দিয়েছে। ওরা আমাদের অতিথি, ওদের শিকার করা খুব অন্যায়। আমি অতিথি পাখির মাংস খেতে চাই না নানাভাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে