চলতি মৌসুমে ধান ও চালের সরকার নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কৃষকরা। কৃষক ও মিল মালিকদের দাবি, সরকার দাম না বাড়ালে সরকারি গুদামে ধান ও চাল দিয়ে তাদের লোকসান হবে। যে কারণে এবার সরকারের আমন সংগ্রহ অভিযানের সাফল্য নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার পর এ উপজেলায় দুই মাসে মাত্র ১৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবার উপজেলায় ১৩ হাজার ৯৬ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছিল। সেখান থেকে ৩৯ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন চাল হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৭০৫ মেট্রিক টন ধান এবং ৬৭ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সরকারি ক্রয়মূল্য ধান প্রতি কেজি ২৮ টাকা এবং চাল প্রতি কেজি ৪২ টাকা। ৬৭ মেট্রিক টন চাল কিনতে উপজেলার তসলিম খান রাইস মিলের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চাল সরবরাহ করা হয়নি। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য অ্যাপ থেকে ক্ষুদেবার্তা ও ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মিলছে না। মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচজন কৃষক মাত্র ১৫ মেট্রিক টন ধান দিয়েছেন।
রাজনগর ইউনিয়নের কৃষক ছয়ফুল মিয়া, সৈয়দ ফুয়াদ হোসেন ও রকিব মিয়া জানান, সরকারি গুদামে ধান নিয়ে গেলে একটু কম শুকানো থাকলে আবার ফিরিয়ে আনতে হয়। ঝাড়াই-বাছাই করে ধান দিতে হয়। এরপরেও মণপ্রতি দাম পাওয়া যায় ১ হাজার ১২০ টাকা। কিন্তু চালকল মালিকরা বাড়িতে এসে ধান নিয়ে যায়। প্রতি মণে পাওয়া যায় ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। গাড়িভাড়া দেওয়া ও ব্যাংকে গিয়ে টাকা তোলার ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। তাই লোকসান করে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে চান না তারা।
তসলিম খান রাইস মিলের মালিক সেলিম খান বলেন, বাজারে প্রতি কেজি চাল ৪৫ টাকা। অথচ সরকার ৪২ টাকা করে দিচ্ছে। এই দামে চাল বিক্রি করলে অনেক টাকার ক্ষতি হবে। বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার দাম পুনর্নির্ধারণ করলে এই ক্ষতি হতো না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ক্ষতি স্বীকার করে চাল সরবরাহ করতে হবে।
উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিবু ভূষণ পাল বলেন, 'আমরা তাদের ফোনে এসএমএস দিয়ে ও কল করে ধান দিতে বলছি। বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ধান দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কৃষকরা বলছেন বেশি দামে মিল মালিক ও পাইকাররা বাড়িতে গিয়ে ধান কিনে নিচ্ছেন। এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।'