রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

কালীগঞ্জের লটকনে পাল্টে গেছে কৃষকের অর্থনৈতিক চিত্র

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা লটকন বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা 'লটকন' -যাযাদি

গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষকের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে এক সময়কার অপ্রচলিত ফল লটকন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করতে পারায় এই ফলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়েই চলছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় দিনে দিনে সোনালি ভবিষ্যৎ গড়ে উঠছে স্থানীয় লটকন চাষিদের। ঘুচে যাচ্ছে বেকারত্বের গস্নানিও। কৃষি অফিস বলছে কম খরচে, কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় প্রতিবছর এ ফলচাষে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।

সরেজমিন উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের বরাইয়াগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের লটকনচাষি আতিকুলস্নাহ ভূঁইয়ার লটকন বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন। টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে হলুদ রঙে পরিপক্ব হয়েছে সুস্বাদু এ ফল। ভিটামিন-সি, প্রোটিন ও ক্যালরিযুক্ত মুখরোচক এ ফল পেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক আতিকুলস্নাহ। বাজারজাতকরণের আগমুহূর্তে নানা পদ্ধতিতে পোকামাকড় দূর করছেন। একই চিত্র দেখা যায় উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও, জামালপুর ইউনিয়নের গোলস্নারটেক, নাগরী ইউনিয়নের নগরভেলা ও সেনপাড়া গ্রামে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জের নাগরী, জাঙ্গালিয়া, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করছেন চাষিরা। তবে কম খরচে, কম সময়ে ভালো ফলন ও অধিক লাভ হওয়ায় প্রতিবছর এ ফল চাষে চাষির সংখ্যা বাড়ছে। গেল বছর উপজেলার ১৯ হেক্টর জমিতে ১১৪ মেট্টিকটন লটকন উৎপাদন হয়েছে। তবে চলতি বছর এর ফলন বাড়ার পাশাপাশি কমপক্ষে এক হেক্টর জমি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ এলাকার লটকন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

উপজেলার বড়গাঁও ভিটিপাড়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ লটকন চাষি মোবারক হোসেন বলেন, আমার বাগানে ১২০টির মতো লটকন গাছ রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলনও খুব ভালো হয়েছে। লটকন ছায়ার মধ্যে হয়। তবে এজন্য আলাদাভাবে শ্রমিক লাগে না। খরচ কম হওয়ায় এ ফল চাষে অনেক লাভ।

একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মো. ঘাবিবুলস্নাহ নামে আরেক লটকনচাষি বলেন, 'ধামি নিজেও লটকন বাগান করেছি। তাছাড়া আশপাশের অনেকেই এই ফলটির চাষ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে লটকন চাষ করে আমি বেশ লাভবান হয়েছি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান রুবেল বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা লটকন চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। সঠিক পরিচর্যা ও সুষম সার ব্যবহারের মাধ্যমে এবার লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, মাঠপর্যায়ে চাষিদের চারা বিতরণ, রোপণ, পরিচর্যা ও রোগবালাই নিরসনে নানা পরামর্শসহ কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, একটা সময় বসতবাড়িতে লটকন চাষ হত। তবে এর চাহিদা থাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে এ ফল বিক্রি করছে কৃষকরা। তাই বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি লটকন দেশের বিভিন্ন বাজার ও স্থানীয় বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এ ফলটির বহুমুখী ব্যবহার করা যেতে পারলে লটকন থেকে আরও অর্থ আয় করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে