কর্মহীন প্রতিবন্ধী স্বামী। তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ। ভিটেমাটি বলতে তেমন কিছুই নেই। আছে পৈতৃক সম্পত্তির একখন্ড জমি। এখন তাদের আশ্রয় সড়কের পাশে জমিতে থাকা কুঁড়ে ঘরে। নিজে ঘর করা বা উপযুক্ত মেয়ের বিয়ে দেওয়া তো দূরে থাক, অভাবের সংসারে দুই বেলা খাবার জোটানোই তাদের জন্য কষ্টের।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়নের মুসলিমবস্নক গ্রামে রাস্তার ধারে এমন মানবেতর জীবন যাপন করছেন বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী জয়নাল আবেদীন (৬৭) ও লিলুফা বেগম (৪৫)। এ দম্পতির মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ ৮ সদস্যের পরিবার।
পরিবারে তাদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় মেয়ে খাদিজা আক্তারকে (৩০) বিয়ে দিয়েছিলেন। পরে স্বামী রেখে যাওয়ায় এক ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তানসহ বাবা-মায়ের সঙ্গেই আছেন। অভাবের তাড়নায় বড় ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে যান শহরে। রেখে গেছেন ৬ বছর বয়সী এক ছেলে। বিয়ের উপযুক্ত মেঝ মেয়ে হালিমা আক্তার (১৮) থাকেন ঘরবন্দী। ছোট মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১৩) স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। অভাব অনটনে তারও পড়াশোনা বন্ধের পথে।
জয়নাল-লিলুফার বড় মেয়ে খাদিজা বলেন, বাবা এমনিতেই প্রতিবন্ধী, 'তারমধ্যে বয়স হয়ে গেছে। তাই এখন কাজ করতে অক্ষম। মাও অসুস্থতার কারণে তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না। আমি অন্যের বাসায় কাজ করে যা পাই, তা দিয়ে জীবন চালাই। সরকার যদি আমাদের একটা ঘর দেয়, তাহলে বাবা-মা, বোনসহ ছেলে সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে থাকতে পারব।'
বৃদ্ধ জয়নাল ও লিলুফা বেগম বলেন, 'আমার মাইয়্যাটা বিয়ার উপযুক্ত। ঘর নাই, মাইয়্যাটারে বিয়া দিতে পারতেছি না। বিভিন্ন দিক থেকে বিয়ের কথা আসলেও ঘরের অবস্থা দেখে চলে যায়। অনেক কষ্ট করে আমরা এখানে থাকি। রাতে ঘুম হয় না। বৃষ্টি আসলে ঘর দিয়ে পানি পড়ে সব ভিজে যায়। আমাদের একটা থাকার ঘর দিলে অনেক উপকার হবে।'
স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই তারা অনেক কষ্ট করে চলেন। আমি দেখেছি তারা অনেক সময় মুড়ি খেয়েও দিন কাটান।' মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল বলেন, 'আমরা তাদের জন্য সরকারি ঘরের বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি শিগগিরই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।' লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, তারা যদি প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীন হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।