শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কালভার্টের ওপর বাঁশের সাঁকো ঝুঁকি নিয়ে পারাপার!

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
রাঙামাটির লংগদুতে বর্ষার পানিতে কালভার্ট তলিয়ে যাওয়ায় সাঁকো দিয়ে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার -যাযাদি

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার লংগদু সদর ইউনিয়নের ভাইবোনে ছড়া গ্রামে পাঁচ বছরেও সংস্কার হয়নি বর্ষার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত 'হাটুর নিচের ব্রিজ' অর্থাৎ কালভার্টটি। কাপ্তাই হ্রদের অববাহিকায় কাচালং শাখা নদীর ওপর নির্মিত কালভার্টটির এক পাশ দেবে গিয়ে এবং পানির নিচে দীর্ঘদিন ধরে হাটু ভেঙে পড়ে আছে। মাটি ধ্বসে গেছে কালভার্টের দুই দিকের সংযোগ সড়কের। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করলেও বর্তমানে সাঁকোটিও ঝুঁকিপূর্ণ।

ঝুঁকি নিয়েই সাঁকো দিয়ে পার হতে হচ্ছে এলাকার শত শত শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের। কালভার্টের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে অনেকগুলো গ্রামে রয়েছে এবং একটি হাট, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে।

লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা বলি বলেন, বর্ষার অল্প পানিতেই কালভার্টটি ডুবে যায় বলে গ্রামের লোকজন কালভার্টটির নাম দিয়েছে 'হাটুর নিচের ব্রিজ'। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এ কালভার্টটি ও সংযোগ সড়ক সংস্কার হওয়া খুবই জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টের পূর্বদিকে কৃষি নির্ভর গ্রামের হাজারও মানুষকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, পাঁচ-ছয় বছর আগে এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কালভার্টটি নির্মাণ করা হলেও বর্ষা মৌসুমে কাজে আসছে না; বরং ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে স্থানীয়রা। গ্রীষ্মের সময়ে যাতায়াত সম্ভব হলেও বর্ষার আগাম বার্তায় তলিয়ে যায় কালভার্টটি। ফলে দুই পাশে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে পার হচ্ছে মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার কৃষক সোলাইমান আলী, জমসের আলীসহ অনেকেই। তাদের অভিযোগ, পাঁচ-ছয় বছর ধরে ছোট এই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় তলিয়ে থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংস্কারের। গ্রামবাসী বিভিন্ন সময়ে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বয়স্ক ও শিশুরা যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। তাদের দাবি যতদ্রম্নত সম্ভব সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক। যাতে এলাকাবাসী সারাবছরই এর সুফল ভোগ করতে পারেন। ৪ নম্বর ভাইবোন ছড়া ইউপি সদস্য মোতালেব বলেন, সেতুর দুই পাশে নির্মিত সাঁকোটি খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো যানবাহন চলে না। সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। এ পথ দিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাট-বাজার, স্কুল কলেজসহ চিকিৎসা নিতে যাওয়া ছাড়া অন্য বিকল্প কোনো পথ নেই।

পার্শ্ববর্তী এপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ নুর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের এ রাস্তাটি ছাড়া যাতায়াতের বিকল্প কোনো পথ নেই। যথাসময়ে নৌকা না পেলে বিশেষ করে রোগীদের কাঁধে নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। এছাড়াও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ও সঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। প্রায়শই শোনা যায়, সাঁকো পারাপারের সময় পড়ে গিয়ে আহত হওয়াসহ বই, খাতা, ড্রেস ভিজে যাওয়ার ঘটনা।

উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, গ্রামীণ কাঁচা সড়কে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় পাকা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের আওতায় নির্মাণ করা সম্ভব।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে