সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক ইউপি সদস্যসহ পাঁচ জেলায় ৬ জনের লাশ উদ্ধার

স্বদেশ ডেস্ক
  ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

পাঁচ জেলায় নানা ঘটনায় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যসহ ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্ণীপুরের রামগঞ্জে দুই লাশ, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গৃহবধূর লাশ, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে পুকুরে ডুবে দুই চাচাত বোন, নেত্রকোনার কলমাকান্দায় সাবেক ইউপি সদস্য এবং শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে অফিস কক্ষে এনজিও ব্যবস্থাপকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

রামগঞ্জ (লক্ষ্ণীপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লক্ষ্ণীপুরের রামগঞ্জ থানা পুলিশ মঙ্গলবার আশারকোটা গ্রাম থেকে সুরুজ মোলস্না (৫৫) ও পৌর রতনপুর গ্রামের ওয়াবদা খাল থেকে জসিমউদ্দিন (৫০) নামের দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে। সৃষ্ট ঘটনায় পৃথক দু'টি মামলা হলে পুলিশ আশারকোট গ্রামের শাহ আলম নামের একজন ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

আশারকোটা গ্রামে নিহত সুরুজ মোলস্নার স্ত্রী রূপালী বেগম জানান, 'সোমবার বিকালে জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমার স্বামী সুরুজ মোলস্না, সাবেক মেম্বার শাহ আলম মোলস্না, আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ আলী ও সৈয়দ আহমদসহ ১০ থেকে ১২ জনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হলে সুরুজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।' রাতেই আশারকোটা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শাহ আলম মোলস্নাকে (৬০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অন্যদিকে একই দিন রাত সাড়ে ১১টায় রামগঞ্জ পৌরসভার রতনপুর দি মর্নিংসান স্কুলসংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবনের পূর্ব পাশের ওয়াবদাখাল থেকে ভাসমান অবস্থায় জসিম উদ্দিন (৫০) নামের এক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জসিম রামগঞ্জ টিচার্স মেডিকেল সেন্টারের চেয়ারম্যান ছিলেন।

রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুরুজ মোলস্না মারা গেছেন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। দুই লাশ ময়না তদন্তের জন্য লক্ষ্ণীপুর সদর হসপিটাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সুমি আক্তার জান্নাত (১৯) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত সোমবার উপজেলার নুরুলস্নাগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণকান্দা গঙ্গাধরদী গ্রাম থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। সুমি ওই গ্রামের সাবেক সেনাবাহিনীর সদস্য রফিকুল ইসলামের মেয়ে এবং ইতালি প্রবাসী শাকিল মাতুব্বরের স্ত্রী। পরিবারের দাবি, তাকে মানসিক নির্যাতন করে মৃতু্যর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সুমির বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, গত এক বছর আগে একই গ্রামের লোকমান মাতুব্বরের ছেলে শাকিল মাতুব্বরের সঙ্গে সুমি আক্তারের বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকেই শাকিল বিদেশে যাওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তিনি পেনশনের ১০ লাখ টাকা জামাতা শাকিলকে দেন। এরপর গত চার মাস আগে শাকিল ইতালি যায়। ইতালি যেতে তার মোট ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়। বাকি আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এই নিয়ে গত রোববার রাতে শাকিলের মা ও তার দুই ভাই রাশেদ ও হান্নান মানসিক নির্যাতন ও মারধর করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর সুমি বাবার বাড়ি এসে স্বামী শাকিলের সঙ্গে মোবাইলে ঝগড়া করেন। তারপর রাত আনুমানিক ৩টায় ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদু্যৎ সরকার জানান, নিহত সুমির বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই চাচাত বোনের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। নিহতরা হলো ফারজানা আক্তার (২) ও লুফা মনি (৩)। তারা ওই গ্রামের ফারুক হোসেন ও রাশেদুল ইসলামের মেয়ে ও সম্পর্কে চাচাত বোন। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের কিসামত গোবধা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, সোমবার বিকালে ফারজানা ও লুফা মনি বাড়ির উঠানে খেলছিল। এ সময় সবার অজান্তে নিখোঁজ হয় তারা। পরে তাদের খোঁজাখুঁজি করেও ব্যর্থ হয় বাড়ির লোকজন। এক পর্যায়ে ওই দিন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে পুকুরে ফারজানার জামা ভাসতে দেখে। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুকুর থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মতিউর রহমান (৬০) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে রামনাথপুর গ্রামের একটি পতিত জমি থেকে এ লাশ উদ্ধার হয়। মতিউর পোগলা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের দু'বারের সদস্য ছিলেন। তিনি একই ইউনিয়নের মূলগাঁও গ্রামের ফজর উদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোরে মতিউর রহমানের মুঠোফোনে কল আসে। পরে দু'জন লোক মোটর সাইকেল করে বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে যায়। সকালে তার ছেলে বাবুল মিয়া তাকে খুঁজতে বাড়ি থেকে বের হন। পরে খবর পেয়ে রামনাথপুর এলাকার একটি পতিত জমিতে তার বাবার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে।

কলমাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি কীভাবে মারা গেছেন, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ভেদরগঞ্জ-নড়িয়া (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় কমল বিশ্বাস নামে নুসার নামে এনজিও ব্যবস্থাপকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের গবিন্দমঙ্গল এলাকা থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। মৃত কমল বিশ্বাস (৫২) ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার মৃত কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কমল দুই বছর ধরে স্থানীয় এনজিও নুসার বিঝারী শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করে আসছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে অফিসের একটি কক্ষে রাতে ঘুমাতেন। মঙ্গলবার সকালে একই শাখার দু'জন মাঠকর্মী অফিস কক্ষে গিয়ে ফ্যানের সঙ্গে কমল বিশ্বাসের মরদেহ ঝুলতে দেখেন।

জব্দ করা ওই চিরকুটে লেখা, 'আমার মৃতু্যর জন্য দায়ী মনজিলা, মাইনুদ্দিন ও ইতি দাস। মনজিলা আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় চুরানব্বই হাজার সাতশ' টাকা নিয়ে তা স্বীকার করছে না। এর সাক্ষী মোক্তার হোসেনের নামে আরও ৮০ হাজার টাকা চেয়েছিল। তাকে না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা শুরু করে, যা মিথ্যা ও বানোয়াট।'

নড়িয়া থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট লেখা কাগজ জব্দ করেছি। সেখানে এনজিওটির টাকা পয়সার বিষয় উলেস্নখ ছিল। তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে