মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

শৈত্যপ্রবাহের কারণে ফের জেঁকে বসেছে শীত

চরম বিপাকে শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ
স্বদেশ ডেস্ক
  ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কুড়িগ্রামে কুয়াশা উপেক্ষা করে কাজে ছুটছেন শ্রমজীবী মানুষ -যাযাদি

শৈত্যপ্রবাহের কারণে ফের জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা, মেঘলা আকাশ, হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে ঠান্ডায় কাবু নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষজন। এসব শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, পৌষের শেষে এসে কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার দাপট কিছুটা কম থাকলেও হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষজন পড়েছেন বিপাকে। রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা। সাড়া দিনে দেখা মেলেনি সূর্যের। ফলে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন মানুষজন।

মঙ্গলবার সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার হাফিজুদ্দি বলেন, 'ঠান্ডায় আমার অবস্থা শেষ। হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় শীতের কাপড় কিনতে পারিনি। মানুষ একটা জ্যাকেট দিছে, সেটা দিয়ে একটু ঠান্ডা কমছে।'

একই এলাকার মান্নান মিয়া বলেন, আজ কুয়াশা কম, কিন্তু ঠান্ডা অনেক। হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। বাতাস কাবু করে ফেলছে।

পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, 'কিছুদিন আগে মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য ২০০ কম্বল পেয়েছি, তা বিতরণ করা হয়েছে। আর কোনো শীতবস্ত্র পাইনি। তবে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, এ রকম তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন থাকবে এবং এ মাসের মধ্যে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, পৌষের শেষে এসে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ঘন কুয়াশা ও হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষজন পড়েছে চরম বিপাকে। রাতে ও সকালে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা। দুপুর ১টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। ফলে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষজন প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে সময়মতো কাজে বের হতে পারছে না।

ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস প্রামানিক বলেন, 'সবচেয়ে এবার কম কম্বল পেয়েছি। সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। আর কোনো শীতবস্ত্র পাইনি।'

ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, শৈত্যপ্রবাহের কারণে নীলফামারীর ডোমারে গত সোম ও মঙ্গলবার সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশা ও মেঘে ঢেকে রয়েছে আকাশ। হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠান্ডার কারণে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষজন। ক্ষেত-খামারে, মাঠে-ঘাটে লোকজনের উপস্থিতি কমে গেছে। প্রয়োজনের তাগিদে বের হওয়া মানুষজনদের সারাদিন গরম কাপড় গায়ে পরে ঘুরতে দেখা গেছে। দুপুরের পর থেকে জনশূন্য হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট এবং হাট-বাজার। ঠান্ডা হাওয়ার কারণে বাইরে চলাচল করা যাচ্ছে না। শহরের রেললাইনের উপর গড়ে ওঠা গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতের গরম কাপড় কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড় বেড়েছে। অভাবী লোকজন গরম কাপড়ের অভাবে বাড়িতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। দিনে এবং রাতে হিমেল বাতাসে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়ার এ অবস্থা বর্তমানে গোটা উত্তরাঞ্চল জুড়ে বিরাজ করছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্ষেত-খামারে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে।

সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ভুজারী পাড়া গ্রামের যুবক আদিত্য কর্মকার বলেন, ঠান্ডায় কাজ করা যাচ্ছে না। তারপরেও সময়মতো ইরি-বোরো রোপণের জন্য জমি তৈরি করছেন। যে হারে ঘন কুয়াশা ও শীত চলছে এতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে শিশুদের মাঝে ডায়রিয়া ও বয়স্কদের মাঝে শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে।

ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল আলম জানান, ইতিমধ্যে ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চার হাজার একশ' কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কম্বলগুলো ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের মাধ্যমে শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে